ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হচ্ছে এক ধরনের ত্রিমাত্রিক পরিবেশ যা কম্পিউটার দ্বারা তৈরি করা হয়ে থাকে। VR ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যবহারকারীরা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি উপভোগ করতে পারে যেখানে তার দেখা সবকিছু আসলের মত মনে হয়। কিন্তু, সবকিছুই হচ্ছে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার দ্বারা তৈরি এক কৃত্রিম জগৎ।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি আধুনিক প্রযুক্তির নতুন একটি আবিষ্কার। তাই অনেকেই জানেন না যে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কাকে বলে। তাই, আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির জনক কে, ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ইতিহাস সম্পর্কেও জানতে পারবেন এই পোস্টে।
তো চলুন, ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বিভিন্ন সুবিধা এবং অসুবিধা সহ কীভাবে এই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হয় তা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, সংক্ষেপে VR, কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার দিয়ে তৈরি এক ধরনের ত্রিমাত্রিক পরিবেশ যা দেখতে আসলের মতো মনে হয় কিন্তু তা আদতে কৃত্রিম। বিভিন্ন প্রযুক্তি ও কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করে 3D অ্যানিমেশন এবং শব্দের মাধ্যমে এই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি তৈরি করা হয়ে থাকে। ফলে, তা আসলেই অনেক উপভোগ্য হয়ে উঠে এবং আসলের মতো মনে হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ফারহান চাঁদে অবতরণ করার অনুভূতি কেমন তা জানতে চায়। কিন্তু, তার পক্ষে চাঁদে যাওয়া বা চাঁদে অবতরণ করা সম্ভব নয়। এজন্য সে VR প্রযুক্তি করে চাঁদে অবতরণ করার অনুভূতি পেয়েছে। কিন্তু সে কি আসলেই চাঁদে অবতরণ করেছে? না। বাস্তবে সম্ভব না এমন অনেক কিছুই করা সম্ভব এবং তা অনুভব করা সম্ভব VR প্রযুক্তি বা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
📌 আরো পড়ুন 👇
এই প্রযুক্তি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে, যেমন শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, থেরাপি, এবং বিনোদন। VR শিক্ষার্থীদের ভার্চুয়াল ফিল্ড ট্রিপে নিয়ে যেতে পারে, জটিল সমস্যাগুলকে আরও সহজ করে বুঝতে সুবিধা করে দিতে পারে, এবং ডাক্তারদের অস্ত্রোপচার অনুশীলন করতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও আরও অনেক উপায়ে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কাকে বলে
প্রকৃতিতে অস্তিত্ব না থাকলেও বাস্তবতার অনুভূতি প্রদান করে এমন একটি কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করার জন্য যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, তাকেই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বলা হয়। কম্পিউটার প্রোগ্রাম এবং বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ত্রিমাত্রিক (3D) অ্যানিমেশন এবং অত্যাধুনিক শব্দ তৈরি করা হয় যা এই প্রযুক্তির ব্যবহারকারীকে বাস্তব জগতের অনুভূতি প্রদান করতে সক্ষম। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ডাক্তারের প্রশিক্ষণ নেয়া, কার ড্রাইভিং, শিক্ষা ক্ষেত্রে, বিনোদনের ক্ষেত্রে সহ আরও অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ইতিহাস
যদিও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) আজকের দিনে ব্যাপকভাবে পরিচিত না হলেও, এর প্রযুক্তির জন্ম অনেক আগেই। 1960 সালে, মার্কিন বিজ্ঞানী থমাস ফারনেস বিমানবাহিনীর জন্য প্রথম ফ্লাইট সিমুলেটর তৈরি করেছিলেন, যা VR-এর ভিত্তি স্থাপন করে। এর কয়েক বছর পর, 1968 সালে হেড মাউন্টেড ডিসপ্লে (HMD) আবিষ্কার VR প্রযুক্তিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায়।
1980 সালে, “ভার্চুয়াল রিয়েলিটি” শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন কম্পিউটার বিজ্ঞানী জেরন ল্যানিয়ার। তিনি VR প্রযুক্তির জন্য গগলস এবং গ্লাভসের মতো প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি তৈরি করেছিলেন। ধীরে ধীরে, VR প্রযুক্তি জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং বিভিন্ন সংস্থা তাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য এটি ব্যবহার করতে শুরু করে।
2007 সালে, Google তাদের VR প্রযুক্তি “গুগল স্ট্রিট ভিউ” চালু করে, যা বর্তমানে Google Maps-এ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। যদিও VR প্রযুক্তি এখনও বিকশিত হচ্ছে এবং বেশিরভাগ দেশে এটি ব্যক্তিগত পর্যায়ে ব্যবহৃত হচ্ছে না। তবে, VR-প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাপূর্ণ। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, বিনোদন এবং থেরাপির মতো ক্ষেত্রগুলিতে VR-এর প্রভাব ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির জনক কে
যদিও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) প্রযুক্তির বিকাশে অনেক বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীর অবদান রয়েছে, জেরন ল্যানিয়ারকে এর জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এককভাবে VR-এর আবিষ্কার না করলেও, ল্যানিয়ার এই প্রযুক্তির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
1980 সালের দশকে, ল্যানিয়ার “ভার্চুয়াল রিয়েলিটি” শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন এবং VR প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় গগলস, গ্লাভস, এবং অন্যান্য সরঞ্জাম তৈরি করেছিলেন। তিনি “VPL Research” নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন যা VR প্রযুক্তি বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির উপাদানগুলো কি কি
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কাকে বলে ও এই প্রযুক্তির ইতিহাস সম্পর্কে ইতোমধ্যে জেনেছি। এছাড়াও, এই প্রযুক্তির জনক সম্পর্কেও জেনেছি। তো চলুন, ভার্চুয়াল রিয়েলিটির উপাদানগুলো কি কি সেটা জেনে নেয়া যাক।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তি পরিচালনা করার জন্য হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার দুইটিই প্রয়োজন হয়ে থাকে। নিচে এগুলো নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করেছি। চলুন, আরও বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
ভিআর সফটওয়্যার
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) এর মূল চালিকাশক্তি হলো এর সফটওয়্যার। কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করতে 3D গ্রাফিক্স ব্যবহার করা হয়, যা Unreal Engine, Autodesk 3D Max, Maya, IRIS VR ইত্যাদি সফটওয়্যারের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। বহুমাত্রিক সাউন্ড (3D, 5D, 8D) তৈরিতেও এসব সফটওয়্যার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অডিও এবং ভিডিও তৈরির পর, বাস্তবসম্মত অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য সেগুলিকে সাবধানতার সাথে ইমপ্লিমেন্ট করা প্রয়োজন। এই ইমপ্লিমেন্টেশন প্রক্রিয়াটি বড় বড় সফটওয়্যার ব্যবহার করে করা হয়। VR-এর বিভিন্ন উপাদান অর্থাৎ অডিও, ভিডিও, ইমেজ, ফুটেজ ইত্যাদি সেট আপ এবং তাদের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য ভালো কনফিগারেশনের কম্পিউটার ব্যবহার অপরিহার্য।
হেড মাউন্টেড ডিসপ্লে
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) প্রযুক্তির কেন্দ্রে রয়েছে হেড মাউন্টেড ডিসপ্লে (HMD)। এই হেলমেট বা চশমা-সদৃশ ডিভাইস ব্যবহারকারীদের ত্রিমাত্রিক (3D) দৃশ্য দেখতে সাহায্য করে থাকে।
HMD-এর ডিসপ্লেতে প্রদর্শিত 3D গ্রাফিক্স VR পরিবেশের সৃষ্টি করে। বাজারে বিভিন্ন দামের HMD পাওয়া যায়, যার মধ্যে জনপ্রিয় কিছু হল HP Reverb G2, HTC Vive 2 Pro, Meta Quest 2, এবং Meta Quest Pro। HMD-এর সাথে সাধারণত ইয়ারফোন বা হেডফোন থাকে যা ত্রিমাত্রিক (3D) শব্দ শুনতে সাহায্য করে। এটি VR অভিজ্ঞতাকে আরও বাস্তবের মতো করে তোলে।
দুঃখজনকভাবে, HMD এখনো বাংলাদেশে সীমিত আকারে পাওয়া যায়। তবে, প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং VR-এর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার সাথে সাথে, ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন আশা করা যায়।
হ্যান্ড গ্লভস
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) অভিজ্ঞতাকে আরও বাস্তবসম্মত করে তোলার জন্য হ্যান্ড গ্লভস একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস। এই বিশেষ ধরনের হাতমোজায় মোশন সেন্সর থাকে যা ব্যবহার করার ফলে ব্যবহারকারীরা বাস্তবের মতো তাদের অস্তিত্ব বুঝতে পারে। কৃত্রিম পরিবেশে স্বশরীরে উপস্থিত আছে মন অনুভূতি সৃষ্টি করার জন্যই এই বিশেষ ধরনের হ্যান্ড গ্লভস ব্যবহার করতে হয়।
ত্রিমাত্রিক দৃশ্যে কোনো বস্তু দেখার পরে তা স্পর্শ করতে চাইলে, হ্যান্ড গ্লভসের সেন্সর সেই বস্তু স্পর্শ করার অনুভূতি তৈরি করে। এটি ব্যক্তির হাতের সাথে কম্পিউটার প্রোগ্রামের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে। কম্পিউটার প্রোগ্রাম থেকে বিভিন্ন সিগন্যাল হাতে পৌঁছে, যা ব্যবহারকারীকে বাস্তব স্পর্শের অনুভূতি দেয়।
বডি স্যুট
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) অভিজ্ঞতাকে পূর্ণাঙ্গ করার জন্য বডি স্যুট একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এতে অসংখ্য মোশন সেন্সর থাকে যা ব্যক্তির নড়াচড়া, শ্বাসপ্রশ্বাস, এবং অন্যান্য শারীরিক কার্যকলাপের তথ্য কম্পিউটার প্রোগ্রামে পাঠায়। বডি স্যুট ছাড়া VR অভিজ্ঞতা অসম্পূর্ণ থাকে। কারণ এটি ব্যবহারকারীকে ত্রিমাত্রিক দৃশ্যের সাথে শারীরিকভাবে যুক্ত করে, যা VR পরিবেশকে আরও বাস্তব মনে করতে সাহায্য করে।
বডি স্যুটের সাথে বিশেষ ধরনের জুতা বা বুটও সরবরাহ করা হয়। এতেও মোশন সেন্সর থাকে যা ব্যবহারকারীর পায়ের নড়াচড়ার তথ্য কম্পিউটারে পাঠায়। বডি স্যুট এবং জুতা থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করে কম্পিউটার VR পরিবেশকে আপডেট করে। এর ফলে, ব্যবহারকারী যখন VR পরিবেশে নড়াচড়া করে তখন ত্রিমাত্রিক দৃশ্য এবং শব্দ তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে পরিবর্তিত হয়।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার
বিশ্বজুড়ে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) প্রযুক্তির জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশে এখনও এর ব্যবহার সীমিত, তবে ধীরে ধীরে এর প্রয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান, চীন, জার্মানির মতো উন্নত দেশগুলোতে VR ইতিমধ্যেই ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অন্যান্য রাষ্ট্রে বিভিন্ন কাজে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এমন কিছু ব্যবহার নিয়ে নিচে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) প্রযুক্তি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বিশেষ করে বিমান, জাহাজের মতো ঝুঁকিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ যানবাহন চালানোর প্রশিক্ষণে এটি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
VR সিমুলেশনের মাধ্যমে পাইলট ও নাবিকরা বাস্তব আকাশপথ বা সমুদ্রপথে যাত্রা করার পূর্বে সেখানকার পরিবেশ সম্পর্কে কৃত্রিম বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে। এর ফলে প্রশিক্ষণ অনেক বেশি কার্যকর হয় এবং চালকরা আরও দক্ষ ও অভিজ্ঞ হয়ে ওঠে।
VR প্রযুক্তি মোটরযান চালনার প্রশিক্ষণেও ব্যবহৃত হচ্ছে। বাস, ট্রাক, মোটরবাইক, মাইক্রো ইত্যাদি যানবাহনের চালকদের জন্য VR সিমুলেশন তৈরি করা হচ্ছে। এই সিমুলেশনগুলিতে বিভিন্ন রাস্তার পরিস্থিতি, আবহাওয়া, এবং ট্রাফিকের অবস্থা তৈরি করা সম্ভব। এর ফলে চালকরা বাস্তব পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হতে পারে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে পারে।
VR প্রযুক্তির ব্যবহার ড্রাইভিং প্রশিক্ষণকে আরও নিরাপদ, কার্যকর, এবং সাশ্রয়ী করে তুলছে। ভবিষ্যতে VR-এর অগ্রগতির সাথে সাথে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ আরও উন্নত হবে এবং যানবাহন চালনা আরও নিরাপদ হবে বলে আশা করা যায়।
সামরিক প্রশিক্ষণ
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) প্রযুক্তি সামরিক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এনেছে। বাস্তব যুদ্ধের অভিজ্ঞতা প্রদান করে সৈনিকদের প্রস্তুত করার জন্য VR সিমুলেশন ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও VR প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে। বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি করতে লোকবল ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ এবং ঝামেলাপূর্ণ।
VR এই সমস্যার সমাধান করে, কৃত্রিম যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি করে যা অল্প খরচে এবং ঝুঁকি ছাড়াই ব্যবহার করা যায়। VR প্রশিক্ষণ সৈনিকদের বাস্তব যুদ্ধের পরিবেশের অভিজ্ঞতা প্রদান করে। তারা যুদ্ধক্ষেত্রের বিভিন্ন পরিস্থিতির সাথে পরিচিত হয় এবং কীভাবে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয় তা শেখে।
বিনোদনের ক্ষেত্রে
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা VR প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিনোদনের একটি মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। VR ব্যবহার করে গেম খেলা, স্ট্রিমিং করা সহ আরও অনেক ধরনের বিনোদন নেয়া সম্ভব হচ্ছে। VR প্রযুক্তিতে তৈরি করা গেমগুলো খেলার সময় ব্যবহারকারীরা বাস্তব জীবনে এসব গেম খেলার মতো অভিজ্ঞতা পায়।
অর্থাৎ, একটি গেম খেলার সময় সেখানে নিজের উপস্থিতি থাকার মতো অনুভূতি হয় VR দিয়ে গেম খেলার সময়। এছাড়াও আরও অনেক উপায়ে VR প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিনোদনের ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। চিকিৎসা জগতে, নবীন ও শল্য চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণে ভিআর ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃত্রিম পরিবেশে রোগীর রোগ নির্ণয়, অস্ত্রোপচার, এবং অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি অনুশীলন করার মাধ্যমে তারা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারছে।
ভিআর শুধু চিকিৎসা জগতেই সীমাবদ্ধ নয়, এর প্রভাব আমাদের প্রাত্যহিক জীবনেও অনুভূত হচ্ছে। মেটাভার্স, যা ভিআর প্রযুক্তির একটি বিবর্তিত রূপ, আমাদের কাছে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। মেটাভার্সে আমরা ঘরে বসেই বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে, কেনাকাটা করতে, এবং খেলাধুলা করতে পারব।
ইকমার্স ক্ষেত্রেও ভিআর প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা চলছে। ভিআর ব্যবহার করে ক্রেতারা পণ্য হাতে নেওয়ার অনুভূতি পেতে এবং এর গুণগত মান যাচাই করতে পারবেন।
এছাড়াও আরও অনেক ক্ষেত্রেই VR প্রযুক্তি আমাদের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করছে। আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনেকভাবেই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারি যা আমাদের কাজের গতি বৃদ্ধি করবে এবং পূর্বের তুলনায় আরও স্মার্টভাবে যেকোনো কাজ সম্পাদন করতে সহযোগিতা করবে। এছাড়াও, বিভিন্ন দৈনিক সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবো আমরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে।
প্রাত্যহিক জীবনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রভাব
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রভাব অনেক গুরুতর হচ্ছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে আমরা অনেক কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম হচ্ছি যা অনেক কঠিন ছিলো। ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ, সামরিক প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা ক্ষেত্রে এবং বিনোদনের ক্ষেত্রে সহ আরও অনেক ক্ষেত্রেই VR প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে যা পূর্বের তুলনায় আমাদের কাজকে আরও সহজ এবং দ্রুত করে তুলছে।
আমাদের বাংলাদেশে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এখনো তেমনভাবে প্রচলিত না হলেও বাইরের অনেক দেশেই এটি এখন ব্যবহার করা হচ্ছে অনেক কাজ সহজেই সম্পাদন করার জন্য এবং বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করার জন্য।
আমাদের দেশেও কয়েক বছরের মাঝেই এই প্রযুক্তি প্রচলিত এবং সবার নাগালের কাছে পৌঁছে যাবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। ফলে, এই প্রযুক্তিটি ব্যবহার করে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের কাজের গতি বৃদ্ধি করতে পারবো এবং এটিকে ব্যবহার করে বিনোদনের মাধ্যম তৈরি করতে পারবো।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সুবিধা ও অসুবিধা
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই এটি আমরা নানাভাবে ব্যবহার করে আসছি। এই প্রযুক্তিটির অনেক ভালো দিক আছে যা আমাদের কাজের গতি বৃদ্ধি করতে সক্ষম। পাশাপাশি এই প্রযুক্তিটি ব্যবহারের কারণে আমরা অনেক সমস্যার মাঝে পড়তে পারি। অর্থাৎ, এই VR প্রযুক্তি সুবিধা এবং অসুবিধা দুইটিই রয়েছে। নিচে এগুলো নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, চলুন জেনে নেয়া যাক।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সুবিধাসমূহ
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের কাজের গতি বৃদ্ধি করতে পারছি, অনেক কঠিন কাজ সহজেই করতে পারছি। যেমন – চিকিৎসা ক্ষেত্রে ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ দিতে, সামরিক ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দিতে অনেক বেগ পোহাতে হতো। কিন্তু, VR প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদেরকে অনেক সহজেই প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব হচ্ছে।
এছাড়াও, বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য VR প্রযুক্তি অধিকতর ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক দুর্গম বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। যা বাস্তবে করতে গেলে অনেক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো। তা অনেক সহজেই Virtual Reality প্রযুক্তি ব্যবহার করে করা সম্ভব হচ্ছে।
📌 আরো পড়ুন 👇
এছাড়াও আরও অনেক সুবিধা রয়েছে যা আমরা ইতোমধ্যে উপরে উল্লেখ করে দিয়েছি। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি আমাদের জীবনে কীভাবে প্রভাব বিস্তার করছে সে অংশ পড়লেই বুঝতে পারবেন।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অসুবিধাসমূহ
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অনেক সুবিধা থাকলেও অনেক অসুবিধাও রয়েছে। এগুলোর মাঝে সবথেকে বড় একটি অসুবিধা হচ্ছে এই প্রযুক্তিতে আসক্ত হয়ে যাওয়া। অবাক হচ্ছেন? VR প্রযুক্তি ব্যবহার করে গেমিং করা বা গেম খেলা এখন অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। একইসাথে VR ব্যবহার করে গেমিং করা সহ বিনোদনের বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করায় অনেকেই আসক্ত হয়ে পড়তে পারে যা ইতোমধ্যে লক্ষ করা যাচ্ছে।
অনেকেই VR প্রযুক্তির বিভিন্ন উপাদান যেমন VR Glass পড়ে রাস্তায় চলাচল করছে যা অনেক রিস্ক। এছাড়াও এই প্রযুক্তিটি ভিন্নভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে যা আমাদের জীবনে সুবিধার থেকে অসুবিধা সৃষ্টি করছে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সম্পর্কে আমাদের মতামত
আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কাকে বলে এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। ইতোমধ্যে VR বা Virtual Reality কীভাবে আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলছে এবং এর সুবিধা ও অসুবিধাগুলো নিয়েও আলোচনা করেছি।
আশা করছি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তিটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আরও এমন তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি প্রতিনিয়ত ভিজিট করুন।