স্মার্ট হোম কি এবং স্মার্ট হোম এর সুবিধা কি তা অনেকেই জানেন না। স্মার্ট বাংলাদেশে অনেকেই এখন স্মার্ট হোম বানানোর দিকে ঝুঁকছেন। ডিজিটাল এই যুগে সবকিছুই এখন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে গেছে। তাই, মানুষ হাতের নাগালেই সবকিছু চায়। আজ আপনাদের সাথে স্মার্ট হোম কি এবং স্মার্ট হোম কাকে বলে সহ স্মার্ট হোম নিয়ে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আলোচনা করবো।
স্মার্ট হোমের লাইট, ফ্যান, দরজা, জানালা, এমনকি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নিয়ন্ত্রণ করা যায় মোবাইল বা কম্পিউটারের মাধ্যমে। ঘরে না থাকলেও আপনি চাইলে বন্ধ করে দিতে পারবেন লাইট, ফ্যান ইত্যাদি সহ যেকোনো সুইচ। মনে করুন আপনি বাইরে গেছেন, এমতাবস্থায় আপনার বাসায় অতিথি এসেছে, আপনি চাইলে বাইরে থেকেই অতিথির জন্য দরজা খুলে দিতে পারবেন। এজন্য লাগবে না কোনো আলাদা চাবি, করতে পারবেন আপনার হাতের মোবাইল ফোন দিয়েই।
মানুষ এখন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছে। তাই, জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। এখন মানুষ বিভিন্ন ডিজিটাল প্রোডাক্ট, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করার পাশাপাশি তাদের বাড়িকেও ডিজিটাল বানিয়ে ফেলেছে। তাই উদ্ভাবন হয়েছে স্মার্ট হোম। তো চলুন, স্মার্ট হোম নিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেয়া যাক।
স্মার্ট হোম কি
প্রযুক্তির অগ্রগতি আমাদের জীবনকে করে তুলেছে আরও সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। এরই ধারাবাহিকতায় এসেছে “স্মার্ট হোম” ধারণা। তবেআপনারা অনেকেই স্মার্ট হোম কি এসব সম্পর্কে জানতে চান। মূলত স্মার্ট হোম বলতে বোঝায় এমন একটি বাসস্থান যেখানে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ও সিস্টেম রিমোট কন্ট্রোল বা প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ঘরের তাপমাত্রা, আলো, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, এমনকি হোম অ্যাপ্লায়েন্স নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের মাধ্যমে। ফলে, ঘরে না থেকেও আপনি আপনার বাড়ির বিভিন্ন দিক নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
সহজ কথায় স্মার্ট হোম হলো, এমন একটি বাড়ি যেখানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাড়ির বিভিন্ন ডিভাইসগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এগুলো হতে পারে আপনার ফোন, ট্যাবলেট বা কম্পিউটার। স্মার্ট হোম ডিভাইসগুলো একসাথে কাজ করে এবং আপনার জীবনকে আরো সহজ এবং স্বয়ংক্রিয় করে তোলে।
স্মার্ট হোমের সুবিধা
আপনার বাড়ি যদি স্মার্ট হোম হয়, তাহলে আপনার অনুপস্থিতিতেও আপনার বাড়িতে প্রিয়জনদের প্রবেশাধিকার দিতে পারবেন। মনে করুন, আপনি অফিসে আছেন এবং হঠাৎ আপনার বাবা-মা বাসায় এসে পড়লেন। আপনার তালাবদ্ধ বাসায় তারা চাবি ছাড়া প্রবেশ করবেন কীভাবে? তাদেরকে বাড়িতে ঢুকতে দেয়ার জন্য আপনাকে অফিস থেকে ছুটে আসতে হবে না। স্মার্ট হোম অ্যাপের সাহায্যে আপনি দূর থেকেই আপনার মোবাইল ফোন বা কম্পউটার ব্যবহার করে দরজা খুলে দিতে পারবেন।
স্মার্ট হোম এর সুবিধাগুলোর মাঝে ঘরের দরজার তালা খোলা ছাড়াও আরও অনেক সুবিধা রয়েছে। আপনি ঘরের আলো জ্বালাতে, থার্মোস্ট্যাট নিয়ন্ত্রণ করতে, এমনকি আপনার বাড়ির নিরাপত্তা ক্যামেরার ফুটেজও দেখতে পারবেন। স্মার্ট হোম প্রযুক্তি আপনার জীবনকে আরও সহজ ও সুবিধাজনক করে তুলতে সক্ষম। সময় বাঁচাতে এবং যেকোনো কাজ পূর্বের তুলনায় আরও সহজ করে তুলতে স্মার্ট হোম প্রতিনিয়ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
📌 আরো পড়ুন 👇
গরমের দিনে ঘরে ফিরে ঠান্ডা পরিবেশের জন্য অপেক্ষা করতে কারোই ভালো লাগে না। স্মার্ট হোম ব্যবহার করে আপনি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। অফিসে বসেই আপনার মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে ঘরের এসি চালু করে দিতে পারবেন। ধরুন, বিকেল ৫টায় আপনি অফিস থেকে বের হবেন। বাসায় পৌঁছাতে আপনার ৩০ মিনিট সময় লাগবে। তাহলে বের হওয়ার ঠিক ২০ মিনিট আগে স্মার্ট হোম অ্যাপের মাধ্যমে এসি চালু করে দিতে পারবেন। এতে বাসায় পৌঁছেই ঠান্ডা ঘর পাবেন।
স্মার্ট হোম ব্যবহার করে শুধু সুবিধাই পাবেন না, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ও করতে পারবেন। আপনি যদি ভুল করে ঘরের এসি/ফ্যান/লাইট বা যেকোনো ডিভাইস চালু করে রেখে যান, তাহলে বাইরে থেকেই আপনার হাতের মোবাইল দিয়ে সেগুলো অফ করে দিতে পারবেন। এতে করে আপনার বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে পূর্বের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি।
এমন আরও অনেক সুবিধা নিয়েই স্মার্ট হোম ধারণা নিয়ে আসা হয়েছে। স্মার্ট হোম থাকলে আপনি পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বসেই আপনার বাড়ির সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। বাড়িতে থাকা সিসি ক্যামেরা দিয়ে বাড়ির অবস্থা পর্যালোচনা করতে পারবেন। এছাড়াও, আরও অনেক সুবিধা পাওয়া যায়।
হোম অটোমেশন কাকে বলে
অটোমেশন হলো হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, ইন্টারনেট এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এক অভিনব মিশ্রণ যা বিভিন্ন প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। এই সিস্টেম যখন আমাদের ঘরে প্রবেশ করে, তখন তাকে বলা হয় হোম অটোমেশন।
হোম অটোমেশন আমাদের জীবনযাত্রাকে করে তোলে আরও সহজ, আরামদায়ক এবং নিরাপদ। আলো, তাপমাত্রা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, এমনকি গৃহস্থালীর যন্ত্রপাতি – সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব মোবাইল ফোনের সাহায্যে। আর হোম অটোমেশনই হচ্ছে স্মার্ট হোম। একটি বাসা-বাড়িকে যখন অটোমেশন করা হবে, তখন সেটি স্মার্ট হোম হয়ে যায়। স্মার্ট হোম এ অনেক সুবিধা পাওয়া যায় যা সাধারণ ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না।
হোম অটোমেশন করার মাধ্যমে একটি বাসাকে যখন স্মার্ট হোমে পরিণত করা হয়, তখন পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে থেকেই মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারের মাধ্যমে উক্ত বাসার সব প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। অটোমেশন থাকার কারণে শুধুমাত্র মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবহার করে সব ডিভাইস পরিচালনা করা যায়। যেহেতু স্মার্ট হোমে সবকিছুই অটোমেশন করা হয়, তাই ঘরের জানালাও বাদ যায়না। সবকিছুই অটোমেশন করে যেকোনো জায়গা থেকে পরিচালনা করা সম্ভব হয়।
স্মার্ট হোম বা হোম অটোমেশন এ ঘরের দরজায় স্মার্ট লক দেয়া থাকে। ফলে, আপনি চাইলে পাসওয়ার্ড/পিন কোড দিয়ে ঘরের দরজা খুলতে পারবেন। এছাড়াও, স্মার্ট হোম অ্যাপ দিয়েও ঘরের দরজা খুলতে পারবেন। ঘরের দরজা লাগাতে ভুলে গেলে ফোন দিয়ে মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই ঘরের দরজা বন্ধ করতে পারবেন।
স্মার্ট হোমের সেবাসমূহ
আপনার ঘরকে স্মার্ট হোম করে তুলতে হলে প্রথমেই একটি ইকোসিস্টেম বেছে নিতে হবে। এই ইকোসিস্টেম হলো মূলত একটি প্ল্যাটফর্ম যা আপনার ঘরের সকল স্মার্ট ও ইলেকট্রিক ডিভাইসকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত করে বা অটোমেশন করে। বর্তমানে বেশ কিছু জনপ্রিয় ইকোসিস্টেম রয়েছে, যেমন গুগল নেস্ট, অ্যামাজন ইকো, অ্যাপল হোমকিট ইত্যাদি।
এই ইকোসিস্টেমগুলো মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে এসব ইকোসিস্টেমগুলোকে তৈরি করা হয়। এতে করে আপনার ঘরে একটি ছোট বক্স আকৃতির ডিভাইস স্থাপন করা হয় যাতে থাকে মাইক্রোফোন এবং স্পিকার। এর সাহায্যে আপনি ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমে আপনার ঘরের সকল ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
এই AI-চালিত ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্ট আপনার একজন সহকারীর মতো কাজ করবে। অনেকটা আমাদের ফোনে থাকা গুগল অ্যাসিস্টেন্টের মতো। উদাহরণস্বরূপ, গুগল নেস্টের ক্ষেত্রে আপনার অ্যাসিস্টেন্ট হবে “গুগল হোম”, যাকে আপনি “গুগল” নামে ডাকতে পারবেন। অ্যামাজন তাদের সিস্টেমের AI-এর নাম দিয়েছে “অ্যালেক্সা” এবং অ্যাপলের ক্ষেত্রে তার নাম “সিরি”।
ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্ট কেবল আপনার ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে না, বরং বিনোদনও প্রদান করবে। আপনি তাদেরকে গান গাওয়ানো, কবিতা পাঠ করানো, এমনকি আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো কাজও করাতে পারেন। ফলে আপনার একাকীত্বের সময় তারা ভালো সঙ্গী হয়ে উঠতে পারে। যাদের স্মার্ট হোম আছে, তারা অনেক সময় এসব ভার্চুয়াল এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট এর সাথে খোশ-গল্পে মেতে থাকেন।
কেন প্রয়োজন স্মার্ট হোম
স্মার্ট হোম কেন প্রয়োজন এই প্রশ্নটি মাথায় আসতেই পারে। বর্তমানে আমরা যেসব প্রযুক্তি বা ইলেক্ট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহার করি, সেসব ডিভাইসকে একত্রে অটোমেশন এর মাধ্যমে কানেক্ট করে চালানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে স্মার্ট হোম পদ্ধতি বা হোম অটোমেশন। অর্থাৎ, পুরো বাড়ির সকল ডিভাইস চালানোর জন্য একটি মাত্র রিমোট বা ডিভাইস।
📌 আরো পড়ুন 👇
একটি উদাহরণ দিলে বুঝতে পারবেন। মনে করুন, আপনার বাসায় অনেকগুলো স্মার্ট ডিভাইস বা ইলেক্ট্রনিক্স প্রযুক্তি আছে, সবগুলো চালানোর জন্য একটি মাত্র রিমোট আছে। তাহলে কেমন হবে? ঠিক তেমনি স্মার্ট হোম এর ক্ষেত্রে আপনি আপনার ফোন বা কম্পিউটার দিয়ে সহজেই পুরো বাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। এছাড়াও, যেকোনো ইকোসিস্টেম ব্যবহার করার মাধ্যমে এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট দিয়ে ভয়েস কমান্ড দিয়েও পুরো বাড়ির সবকিছু কন্ট্রোল করতে পারবেন।
স্মার্ট হোম সম্পর্কে আমাদের মতামত
আজ আপনাদের সাথে স্মার্ট হোম কি, স্মার্ট হোম কাকে বলে, হোম অটোমেশন কি এবং হোম অটোমেশন এর বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে আলোচনা করেছি। স্মার্ট হোম এর সুবিধাসমূহ কী কী তা জানতে পারবেন পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে। প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে এখন মানুষ প্রযুক্তির উপর অনেক বেশি পরিমাণে ঝুঁকে পড়ছে। তাই, স্মার্ট হোম এর মতো অনেক প্রযুক্তির উদ্ভাবন হচ্ছে যা আমাদের জীবনকে আরও সহজ করে তুলছে।
স্মার্ট হোম সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন। আমরা দ্রুত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। এতক্ষন ডিয়ার টেক ব্লগের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।