গীবত কাকে বলে? গীবত কত প্রকার ও কি কি

পোষ্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

5/5 - (1 vote)

গীবত সবচেয়ে নির্কৃষ্টতম কাজ গুলোর মধ্যে একটি। গীবত হলো কারো বিরুদ্ধে বিনা প্রয়োজনে তার দোষ অন্যদের মাঝে বলা। কোনো ব্যাক্তির অনুপস্থিতিতে তার সমালোচনা করা। ইসলামে গর্হিত কাজ গুলোর মধ্যে গীবত অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। আমরা জেনে বা না জেনে প্রতিদিন গীবতে সামিল হচ্ছি। অন্যের নামে দোষ রটনা করছি। কিন্তু আপনি জানেন কি ইসলামে গীবতের শাস্তি সম্পর্কে?

আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো গীবত সম্পর্কে বিস্তারিত সকল কিছু। যদি আপনি গীবত সম্পর্কে ধারণা পেতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেল টি শেষ পর্যন্ত পড়ার চেষ্টা করুন।

গীবত কাকে বলে

গীবত কাকে বলে, গীবত কত প্রকার ও কি কি, গীবত এর ভয়াবহতা, গীবত থেকে বাচার উপায়,

কোনো ব্যাক্তির বিরুদ্ধে তার অগোচরে এমন কিছু কাউকে বলা যা শুনলে উক্ত ব্যাক্তি কষ্ট পাবে তাকে গীবত বলা হয়। ইসলামে পরনিন্দা একটি হারাম কাজ। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরান শরিফ ও হাদিসে অনেক আয়াত আছে। 

যদি উক্ত ব্যাক্তির মাঝে দোষ থাকে আর সেটা অগোচরে আলোচনা ও সমালোচনা করা হয় তাহলে সেটা গীবতের মধ্যে পরবে। গীবত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে মহানবী (সা) বলেছেন – যদি তোমার ভাইয়ের অগোচরে তার কোনো দোষ আলোচনা করো তাহলে সেটাই গীবত। তখন সাহাবায় কেরাম জিজ্ঞেস করলেন যদি উক্ত দোষ ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলে কি হবে?

মহানবী (সা) বললেন – যদি উক্ত দোষ তার মাঝে বিদ্যমান থাকে তাহলে গীবত আর যদি দোষ না থাকে তাহলে তার উপরে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হলো।

উক্ত হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি কোনো মানুষের অনুপস্থিতিতে তার  বিরুদ্ধে এমন কিছু নিয়ে আলোচনা করা যা শুনলে তার মন খারাপ হবে উক্ত কাজ কে গীবত বলা হয়। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) গীবত কে যেনার চেয়েও মারাত্নক হিসেবে উল্লেখ্য করেছেন।

📌 আরো পড়ুন 👇

যদি কোনো ব্যাক্তি যিনা করার পরে তার ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় ও তাওবা করে তবে আল্লাহ তাকে মাফ করে দিতে পারেন তবে গীবত কারীর ক্ষেত্রে তওবার কোনো বিধান রাখা নেই।

গীবত কত প্রকার ও কি কি 

মানুষ বিভিন্ন কারনে মানুষের নামে বদনাম রটায়। অনেক ক্ষেত্রে হিংসার বশবর্তী হয়ে অন্যের নামে সমালোচনা করে। গীবতের কয়েকটি প্রকারভেদ হলো –

  • শারিরীক অবস্থা নিয়ে গীবত
  • পরোক্ষ ভাবে গীবত
  • পোষাক নিয়ে গীবত
  • বংশ মর্যাদা নিয়ে গীবত
  • বিভিন্ন বদ অভ্যাস নিয়ে গীবত
  • গীবত শোনা

গীবত করা ও শোনা দুটাই অপরাধ বলে গন্য করা হবে। অনেকে ভাবতে পারেন আমিতো গীবত করিনা কারো নামে তবে শুধু শুনি। শোনার কারনে আপনার সমান পাপ হবে। কারন গীবতাকারীর গীবত যদি কেউ শোনার না থাকে তবে সে গীবত করতে পারবে না। 

কে শ্রেষ্ঠ সেটা শুধু মাত্র আল্লাহ তায়ালা ভালো জানেন। কারো নামে তার পিছনে তার নামে কোনো ধরণের সমালোচনা করা নিজের পাপ বৃদ্ধি ছাড়া কিছুই বয়ে আনে না।

গীবত এর ভয়াবহতা

গীবত কাকে বলে, গীবত কত প্রকার ও কি কি, গীবত এর ভয়াবহতা, গীবত থেকে বাচার উপায়,

গীবত এর ভয়াবহতা অনেক বেশি মারাত্নক। ইসলামে হারাম কাজ গুলোর মধ্যে একটি গীবত। এমন কি হাদিসে বলা হয়েছে অন্যান্য গুনাহ এর জন্য তাওবার রাস্তা থাকলেও গীবতের জন্য তওবা করার কোনো বিধান নেই। 

বর্তমান সময়ে গীবত নেই এমন কোনো অঞ্চল বা মানুষ হয়ত খুজে পাওয়া অসম্ভব। আল্লাহ বলেন- তোমরা গীবত করোনা তাহলে ধংস হয়ে যাবে। তবে আমরা নিজেরাই নিজেদের কে বিপদের মধ্যে নিপতিত করছি। গীবত আমাদের কে কিছুই দিতে পারে না শুধু মাত্র গুনাহ ছাড়া। 

পবিত্র কোরআন শরিফে গীবত কে মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। উক্ত আয়াত থেকে আর ভয়াবহতার কথা আচ করতে পারি। হাদিসে বলা হয়েছে – যেনার চেয়ে ও মারাত্নক গুনাহ হলো গীবত করা। 

যার বিরুদ্ধে গীবত করা হয় তার সকল গুনাহ গীবতকারির আমলনামায় দিয়ে দেয়া হয়। আর গীবত হলো একটি কবিরা গুনাহ। গীবত কারীর দোয়া কখনো আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন না। আল্লাহ তায়ালা গীবত কারীদের অপছন্দ করেন। 

যিনি গীবত করেন তিনিও ভয়ে থাকেন পশ্চাতে মানুষ তাকে নিয়ে কি ধারণা পোষন করেন। এটা গীবতকারীর মানুষিক শান্তি কে বিনষ্ট করে দেয়। পরনিন্দার মাধ্যমে মানুষ একে অপরের বন্ধু থেকে শত্রু তে রুপান্তরিত হয়।

গীবতকারীকে মানুষ ও পছন্দ করেন না। তাকে সবাই দোষ চর্চাকারি হিসেবে চিহ্নিত করে। গীবত কারির জীবনের কোনো নেক আমল কবুল করা হয় না। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল মুসলমান ভাই ও বোনদের গীবতের নতো জগন্য পাপ থেকে বেচে থাকার তৌফিক দান করুন।

গীবত থেকে বাচার উপায়

গীবত কাকে বলে, গীবত কত প্রকার ও কি কি, গীবত এর ভয়াবহতা, গীবত থেকে বাচার উপায়,

গীবতের মত মারাত্নক পাপ থেকে নিজেকে সর্বদা রক্ষা করতে হবে। একজন খাটি ঈমানদার হওয়ার ক্ষেত্রে গীবত করা একদম পরিহার করতে হবে। গীবত থেকে বাচার জন্য কয়েকটি কাজ আপনি করতে পারেন –

যখন কারো বিরুদ্ধে আপনার মনে গীবতের উদ্বেগ জাগ্রত হবে তখন আপনি আপনার দোষ গুলো মনে করার চেষ্টা করুন। আপনার ভুল গুলো জেনে আল্লাহর কাছে সেটা নিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করতে মশগুল হতে পারেন।

অন্যের দোষ অন্যের কাছে বলায় কোনো মাহাত্ব্য নেই। অন্যের গুন গুলো অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিন এতে উক্ত ব্যাক্তি আপনার শত্রু থেকে বন্ধু তে পরিনত হবে। 

আপনি অন্যের দোষ লুকিয়ে রাখলে আপনার দোষ ও মানুষ লুকিয়ে রাখবে তাই অন্যের দোষ সম্পর্কে জানতে নিজের মূলব্যান সময় নষ্ট করবেন না। 

গীবত শ্রবন করা গীবতে অংশ নেয়ার মতই। তাই কোনো স্থানে গীবত হলে সেখান থেকে নিজেকে আড়াল করে নিতে হবে।

সর্বোপরি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও খাটি মুমিন হওয়ার ক্ষেত্রে সবসময় আল্লাহ কে ভয় পেতে হবে। আল্লাহ আমাদের দেখছেন আমরা যা কিছুই করি না কেন। উক্ত উপায় গুলোর মাধ্যমে আপনি গীবত থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারবেন ইনশাল্লাহ। তবে আপনার একাগ্র ইচ্ছা শক্তি এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

গীবতের কাফফারা

আমরা অনেক সময় গীবত এড়িয়ে চলতে গিয়েও ভুলে গীবতে সামিল হয়ে পরি। আমরা আমাদের জীবনে কতই না গীবত করেছি। গীবতের জন্য তওবা করার কোনো বিধান নেই। তবে গীবতের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করলে আল্লাহ কি করবেন তিনি ভালো জানেন। 

আল্লাহ তায়ালার অসিম দয়া। আপনি যার নামে গীবত করেছেন তার সব প্রশংশনীয় দিক গুলো মানুষের মাঝে বলুন। তার ও আপনার গুনাহ এর জন্য আল্লাহ এর কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। 

📌 আরো পড়ুন 👇

যদি আপনি ভুল করে কোনো ব্যাক্তির নামে গীবত করেন তবে উচিত হবে সবার আগে উক্ত ব্যাক্তির কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়া। তবে এটার যদি কোনো সুজোগ না থাকে তাহলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া,  তাওবা করা। পরবর্তী সময়ে আর কোনো গীবতে অংশ না নিলে আল্লাহ হয়ত বা ক্ষমা করতেও পারেন।

গীবত কিসের চেয়ে মারাত্নক

হাদিসে উল্লেখ্য করা হয়েছে গীবত যিনার চেয়েও মারাত্নক।

গীবত কিসের চেয়ে জঘন্য অপরাধ

মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়ার চেয়েও জঘন্য অপরাধ হলো গীবত।

গীবত সম্পর্কে আমাদের মতামত 

গীবত একটি কবিরা গুনাহ ও ইসলামে সবচেয়ে বর্জনীয় কাজ গুলোর একটি। ইসলাম থেকে মানুষ কে বিপথগামী করার ক্ষেত্রে গীবত কাজ করে। আমাদের সকল কে গীবত থেকে দূরে থাকতে হবে। গীবত শুধু পরকালের জীবন নষ্ট করে না বরং ইহকালের জীবনেও নানান সমস্যার মূল একটি কারণ হলো অন্যের নামে গীবত করা। গীবত শ্রবণ করা ও করা দুটোই একি অপরাধ। তাই গীবত থেকে বাচতে হলে শোনা ও বলা দুটোই পরিহার করতে হবে।

গীবত সম্পর্কে যদি প্রশ্ন থেকে থাকে, তাহলে কমেন্ট করুন। আমরা আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। এতক্ষন ডিয়ার টেক ব্লগের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।


পোষ্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Comment