পারিবারিক আয় ও ব্যয় কাকে বলে? পারিবারিক বাজেট কাকে বলে

পোষ্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

4.3/5 - (18 votes)

পারিবারিক আয় কাকে বলে পরিবার হলো সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতিটি পরিবারে আয় ও ব্যয় ঘটে। যদি সঠিক ভাবে পরিবারের আয় ও ব্যয় পরিচালনা করতে ব্যার্থ হয় তাহলে পরিবার আর্থিক সংকটে পতিত হবে। পরিবারের আর্থিক উন্নতির ক্ষেত্রে পরিবারে আয় ও ব্যয় সম্পর্কে জানা অনেক বেশি জরুরী।

প্রিয় শিক্ষার্থীবন্ধুরা – আজকের আর্টিকেলে পরিবার অধ্যয়ের পারিবারিক আয় ও ব্যয় ও বাজেট তৈরি ইত্যাদি সহজ ভাবে বুঝিয়ে দেয়া হবে। যদি পারিবারিক আয় ব্যাপারে কোনো সমস্যা থাকে আশা করা যায় আজকের আর্টিকেল টি অনেক সাহায্য করবে।

পারিবারিক আয় কাকে বলে

পরিবারের আয় কে পারিবারিক আয় বলে। যদি পরিবারের একজন লোক আয় করে তার আয়ের হিসাব অনুযায়ী পারিবারিক আয় হিসাব করা হবে। অন্যদিকে পরিবারে সকল সদস্য যদি আয় করে থাকে তাহলে পরিবারের সবার আয়ের মোট টাকা পরিবারে আয় হিসেবে ধরা হবে। এক কথায় বলে – পরিবারে সমস্ত আয় কে পারিবারিক আয় বলা হয়।

পারিবারিক ব্যয় কাকে বলে

পরিবার বহনের খরচ কে পারিবারিক ব্যয় বলে। সমাজে একটি পরিবার প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে পরিবারে আয় যেমন থাকে তেমনি পারিবারিক ব্যয় ও থাকে। পরিবার চালাতে বিভিন্ন ধরণের ব্যয় হয়ে থাকে। পরিবারে সব ব্যয় কে মূলত পারিবারিক ব্যয় বলা হয়ে থাকে।

পারিবারিক আয় ও ব্যয় বলতে কি বুঝ

পারিবারিক আয় হলো পরিবারে আর্থিক ইনকাম পাশাপাশি পরিবার নিয়ে বাস করার ফলে যে ব্যয় হয় তাকে পারিবারিক ব্যয় বলা হয়। যে কোনো পরিবারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের ব্যায়ের মাধ্যম আছে যেগুলো আমরা পারিবারিক বাজেট তৈরি তে বিস্তারিত দেখতে পাবো।

পরিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম

পারিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম

পরিবার কে সুষ্ঠভাবে নিয়ন্ত্রন করার জন্য পারিবারিক বাজেট তৈরি করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আয়ের তুলনায় ব্যায়ের সংখ্যা বেশি হয়ে গেলে পারিবারিক ক্ষতির সম্মূখিন হতে হয়। কোনো এক সময়ের ভিত্তিতে আয়, ব্যয় ও সঞ্চয় করার পরিকল্পনাকে পারিবারিক বাজেট বলে।

📌 আরো পড়ুন 👇

আয়ের পরিমানের উপর নির্ভর করে পারিবারিক বাজেট তৈরি করতে হবে। পারিবারিক বাজেট তৈরির ক্ষেত্রে আয়ের পরিমানের কিছু অংশ সঞ্চয় করার পরিকল্পনা করতে হবে। পারিবারিক বাজেট হতে পারে ১ সপ্তাহ বা ১ মাস বা ১ বছর সময় যেটাই হোক না কেন উক্ত সময়ের আয়ের ও ব্যায়ের হিসাব এর পরিকল্পনা কে পারিবারিক বাজেট বলা হয়।

পারিবারিক বাজেট তৈরি করার ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে সেগুলো হলো –

১. প্রয়োজনীয় দ্রব্য তালিকা

যে সময়ের জন্য পারিবারিক বাজেট তৈরি করা হবে উক্ত সময়ে কি কি দ্রব্য পরিবারে প্রয়োজন হবে সেগুলো একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। তালিকা থেকে প্রথমে যেটা একদম প্রয়োজন অর্থ্যাত প্রধান দ্রব্য গুলো কে আলাদা করে নিতে হবে।

২. দ্রব্য মূল্য তালিকা

দ্রব্য তালিকা অনুযায়ী প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য লিখতে হবে।

৩. সম্ভাব্য আয়

যে সময়ের জন্য বাজেট তৈরি করা হবে উক্ত সময়ের মধ্যে পারিবারিক কত টাকা আয় হতে পারে সেটা নির্ধারণ করতে হবে। তবে কখনোই সম্ভাব্য আয়ের চেয়ে অতিরিক্ত আয় ধরা যাবে না।

৪. আয় অনুযায়ী ব্যায়ের সমতা

পারিবারিক আয়ের পরিমান অনুযায়ী ব্যায়ের পরিমান নির্ধারণ করতে হবে। বাজেটে আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয় রাখা যাবে না।

৫. সঞ্চয় করা

প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভবিষ্যতে কি হতে পারে এটা কেউ জানে না। তাই ব্যয় এর পরিমান বেশি হলেও সেখান থেকে কিছু অংশ সঞ্চয় এর জন্য রাখতে হবে।

৬. পরিকল্পনা অনুযায়ী বাজেট

পারিবারিক বাজেট এমন ভাবে করতে হবে যেন সেটা বাস্তব সম্মত হয়। পরিবারে প্রয়োজন ও মিটে যায় আর হঠাত করে যদি কোনো খাতে বাজেট এর পরিমান বৃদ্ধি পায় তাহলে অন্য বাজেট কমিয়ে সেটা পুষিয়ে নেয়া যায়।

সমাজের বিভিন্ন পরিবারের ব্যায়ের খাত গুলো ভিন্ন হয়ে থাকে। পরিবারে মর্যাদা ও সমাজের অবস্থান অনুযায়ী আয় ও ব্যায়ের পার্থক্য ঘটে। তবে সাধারণ ভাবে – খাদ্য খাতে শতকরা ২০ থেকে ২৫%, বস্ত্র খাতে ৫% থেকে ১০%, বাসস্থান খাতে ৩০% থেকে ৪০%, শিক্ষা খাতে ১০% থেকে ১৫%, যানবাহন খাতে ১৫% থেকে ২০% খরচ করা যেতে পারে। নিচে পারিবারিক সদস্য ০৬ জন ধরে আনুমানিক একটি বাস্তবসম্মত পারিবারিক বাজেটের নমুনা দিলাম –

উক্ত নমুনা অনুযায়ী পরিবারের সদস্য সংখ্যা ও আয় অনুযায়ী পারিবারিক বাজেট তৈরি করতে হবে।

পারিবারিক আয় ও ব্যায়ের হিসাব

পরিবারে আয় ও ব্যায়ের হিসাব রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কত টাকা আয় হয়েছে আর কত টাকা ব্যয় হয়েছে এটার হিসাব অনুযায়ী পরিবার পরিচালনা করতে হবে। যে কোনো ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের মতোই পরিবারের আয় ও ব্যায়ের হিসাব রাখা প্রয়োজন। পরিবারে আয় ব্যায়ের হিসাবের প্রয়োজনীয়তা –

১. প্রতিদিনের হিসাব

পরিবারে প্রতিদিনের আয় ও ব্যায়ের পরিমান হিসাব রাখতে হবে। প্রতিদিনের হিসাব রাখার ফলে সঠিক ভাবে পরিবারে খরচ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

২. পরিবার ব্যাবস্থাপনা

সঠিক ভাবে আয় ও ব্যায়ের হিসাব না রাখলে যে কোনো সময়ে আর্থিক সংকটে পতিত হতে পারে। আয়ের পরিমানের চেয়ে ব্যায়ের হিসাব বেশি হয়ে গেলে অন্য কোনো খাতে ব্যায়ের পরিমান কমিয়ে এনে ব্যাবস্থাপনা করা যায়।

৩. আর্থিক উন্নতি

পরিবারে সঠিক  ভাবে আয় ও ব্যায়ের হিসাব পারিবারিক আর্থিক উন্নতির দিকে ধাবিত করে।

৪. সম্পদের বন্টণ

সঠিক ভাবে পরিবারের আয়ের ও ব্যায়ের হিসাব রাখলে পরিবারে সকল সদস্যদের মাঝে সম্পদ সঠিক ভাবে বন্টন করা যায়।

৫. পারিবারিক কলহ দূর

পরিবারের সদস্যদের মাঝে কলহ দূর করতে সঠিক ভাবে হিসাব এর মাধ্যমে পারিবার বহন করা অনেক বেশি জরুরী।

পারিবারিক আয়ের উৎস কি কি

একটি পরিবার দুই ভাবে আয় করতে পারে। পরিবারে প্রধান আয়ের উৎস ও অতিরিক্ত ভাবে আয়ের উৎস থাকতে পারে।

  • প্রধান আয়ের উৎস – প্রধান আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করে চাকরি, ভুমি, ব্যবসা ইত্যাদি থেকে।
  • অতিরিক্ত আয়ের উৎস – পরিবারের অতিরিক্ত আয়ের উৎস হলো – পার্ট টাইম কাজ ও বিভিন্ন ভাবে স্বল্প মেয়াদি কাজের মাধ্যমে পরিবারে আয় বৃদ্ধি করা।

পরিবারে কয়েকটি আয়ের উৎস হলো –

  • চাকরিঃ চাকরি হলো পরিবারের প্রধান একটি আয়ের উৎস। চাকরির ক্ষেত্রে সরকারি কিংবা বেসরকারি অথবা কোনো প্রতিষ্ঠানের চাকরি হিসেবে ধরা হয়।
  • ব্যবসাঃ পরিবারে প্রধান একটি আয়ের উৎস ব্যবসা। নিজস্ব ব্যবসা থেকে আয় করা।
  • অন্যান্য আয়ঃ বাড়ি ভাড়া, পেনসন ইত্যাদি ধরণের আয়।
  • ভুমি আয়ঃ ভুমি থেকে ফসল , খাজনা ইত্যাদি উপায় আয়।
  • অতিরিক্ত আয়ঃ পরিবারে মূল আয়ের সাথে অতিরিক্ত আয় গুলো অতিরিক্ত আয়ের উৎস হিসেবে ধরা হয়।

পারিবারিক বাজেট কাকে বলে

আজকের এই দ্রুতগতির জীবনে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।  বিশেষ করে যখন একটি পরিবার  একাধিক সদস্য নিয়ে গঠিত হয়।  তখন পরিবারের আয় ও  ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে পারিবারিক বাজেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

পারিবারিক বাজেট হলো পরিবারের আয় অনুযায়ী একাধিক সদস্য চাহিদা পূরণের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনায় যেমন আয়ের বিভিন্ন খাতের বিবরণ থাকে তেমনি পরিকল্পিত ব্যয়ের বিভিন্ন খাতের বিবরণ থাকে।

তবে সহজ কথায় বলতে গেলে পারিবারিক বাজেট বলতে এমন একটি পরিকল্পনাকে বোঝানো হয় যেখানে একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য পরিবারের আয় অনুযায়ী ব্যয়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা হয়।

নিয়মিত বাজেট তৈরি করে এবং পর্যবেক্ষণ করে, পরিবারের আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব। বাজেট তৈরি ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা পরিবারের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারি। 

পারিবারিক বাজেটের সুবিধা কি কি

পরিবার কে সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পারিবারিক বাজেট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। পারিবারিক বাজেট তৈরি করার মাধ্যমে একটা পরিবার কে আর্থিক ভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। সমাজের রুচিভেদে পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা মোকেবেলা করা যায়। পরিবারে আর্থিক সংকট দূর করতে অনেক সাহায্য করে।

পরিবারের ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও সম্পদের সুষ্ঠ বন্টনের ক্ষেত্রে পারিবারিক বাজেট অনেক বেশি জরুরী। আয় অনুযায়ী ব্যয় ও দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে সাহায্য করে পারিবারিক বাজেট। পারিবারিক বাজেট পরিকল্পনা ছাড়া পরিবার সঠিক ভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। একটি পরিবার হলো সমাজে একটি মূল অংশ। সুখি পরিবার গঠনে দায়িত্ব নিয়ে পরিবার পরিচালনা করতে পারিবারিক বাজেট অনেক বেশি সাহায্য করে।

পারিবারিক আয় ও ব্যয় সম্পর্কে আমাদের মতামত

পরিবারের সুখ-শান্তি বজায় রাখার জন্য আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা অপরিহার্য। এই বিষয়ে পরিবারের সকল সদস্যের অংশগ্রহণ ও সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা পরিবারের আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হলে ঘাটতি দেখা যাবে। এমনকি ঋণের বোঝা বাড়তে পারে। ফলে জীবন যাত্রার  মানের অবনতি ঘটতে পারে। এজন্য পারিবারিক বাজেট সম্পর্কে সকল সদস্যের সাথে আলোচনা করা উচিত।

পারিবারিক আয় ও ব্যয় সম্পর্কে যদি প্রশ্ন থেকে থাকে, তাহলে কমেন্ট করুন। আমরা আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। এতক্ষন ডিয়ার টেক ব্লগের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।


পোষ্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Comment