আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নাম – কৃষি হলো একটি দেশের প্রাণ। একটি দেশের সকল খাদ্য স্বল্পতা দূর করতে কৃষি সবচেয়ে বড় ভুমিকা রাখে। যে কোনো দেশের ক্ষেত্রেই অর্থনীতিতে অনেক বড় প্রভাব ফেলে কৃষি। বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল হলো কৃষি। প্রাচীন কাল থেকেই নানাবিধ উপায় ফলন বৃদ্ধি করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
যেহেতু কৃষি হলো একটি দেশের মূল মেরুদন্ড তাই কৃষি কাজের যন্ত্রপাতির আধুনিকিকরণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দিনে দিনে কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রসার দুটোই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের আজকের আর্টিকেলে আপনাদের জানাবো আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নাম গুলো সম্পর্কে। যদি আপনি কৃষি কাজে ব্যবহুত হয় এমন আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আর্টিকেল টি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নাম
বিশ্বের প্রায় সব দেশে এখন কৃষি কাজের জন্য সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শ্রম ও সময় দুটোর অপচয় বন্ধ করেছে। অল্প সময়ে অধিক কাজ করার জন্য প্রযুক্তি আমাদের অনেক বেশি সহায়তা করে। প্রযুক্তির কল্যানে আগে ১ বিঘা জমি চাষ করতে যত কাজের মানুষের প্রয়োজন হতো সেখানে অল্প সময়ে শুধু মাত্র একটা যন্ত্র ব্যবহার করে একই কাজ করা হচ্ছে। তবে এখনো অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের প্রযুক্তি অনেক পিছিয়ে আছে। নিচে আমরা আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির কয়েকটি নাম দিয়ে দিলাম –
১. থ্রেসার – আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নাম
ধান কিংবা গম হাতে মাড়াই করা ছিল আগেরকার দিনের অন্যতম একটি পেশা। তবে এটাতে একদিকে যেমন অনেক বেশি সময় খরচ হতো অন্যদিকে অনেক বেশি ব্য্যবহুল ছিল। তবে আধুনিক এই সময়ে থ্রেসার প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুব সহজেই অল্প সময়ের মধ্যে ধান কিংবা গম মাড়াই করা যায়।
এই প্রযুক্তি দিয়ে আপনার ক্ষেত্রে থাকা ফসল গুলো খড় থেকে আলাদা করে নিতে পারবেন। প্রযুক্তি টি একদম নিখুত ভাবে কাজ করে। বর্তমানে ফসল আলাদা করার জন্য থ্রেসার প্রযুক্তির ব্যবহার চোখে পড়ার মতো।
২. রাইস ট্রান্সপ্লান্টার – আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নাম
এটা দিয়ে মূলত ধানের বীজ বপন করা হয়। অনেক বড় জমি গুলোতে অল্প সময়ের মধ্যে বীজ রোপণ প্রক্রিয়া শেষ করতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় রাইস ট্রান্সপ্লান্টার। অনেকে ভাবতে পারেন হাতে লাগানো বীজ বপণ করলে সঠিক ভাবে করা যায় কিন্তু এই প্রযুক্তি দিয়ে কি সঠিক ভাবে বীজ জমিতে রোপণ করা যাবে?
উত্তর হচ্ছে “হ্যা”। এটা দিয়ে একদম সঠিক ভাবেই হাতের স্পর্শ ছাড়াই আপনারা ধানের বীজ জমিতে বপণ করতে পারবেন। এই মেসিন দিয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যে অনেক জায়গা জুড়ে বীজ লাগানো যায়। যা মানুষ দিয়ে করানো অনেক বেশি সময় সাপেক্ষ।
৩. ট্রাক্টর – আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নাম
ট্রাক্টর বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ব্যবহুত একটি কৃষি প্রযুক্তির নাম। ট্রাক্টর প্রযুক্তি দিয়ে একদিকে যেমন লাজ্ঞল দেয়া যায় অন্যদিকে ফসল কাটার কাজেও এটি ব্যবহার করা যায়। এটা দিয়ে বিভিন্ন ধরণের কৃষি কাজের উপকরণ সরবরাহ করা যায়। কৃষি কাজের ক্ষেত্রে ট্রাক্টর অনেক বেশি কাজের একটি প্রযুক্তি।
৪. হারভেস্টার – আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নাম
এই প্রুযুক্তি ব্যবহার করে ধান, গম ইত্যাদি কাটার কাজে ব্যবহার করা হয়। থ্রেসার শুধু মাত্র ফসল কাটতে পারে তবে যদি ধানের গাছ সহ আপনাকে ফসল সংগ্রহ করতে হয় তবে সবচেয়ে সুবিধা দিতে পারবে হাসভেস্টার।
বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে হারভেস্টার। গরমের সময়ে ধান কাটা অনেক বেশি কষ্টসাধ্য হয়ে যায় সাধারণ কৃষিজীবি মানুষের। এই সমস্যা থেকে বাচাতে এখন অনেকেই হারভেস্টার দিয়ে কম সময়ে অনেক পরিমানে জমির ধান সংগ্রহ করে।
৫. বেলার – আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নাম
বেলার একটি আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নাম। এটা দিয়ে বিভিন্ন ধরণের কৃষি উপকরণ সহজেই আনা নেয়া করা যায়। বিশেষ করে খড় জাতীয় ফসল গুলোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় বেলার।
৬. ব্যাচ ড্রায়ার – আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নাম
কৃষি তে আধুনিক প্রযুক্তির আরো একটি নাম হলো ব্যাচ ড্রায়ার। এটা দিয়ে সাধারণত ভিজে ধান গম ইত্যাদি শুকানো যায়। খাদ্য শস্য যদি ভিজা থাকে তাহলে সেটা দ্রুত সময়ের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়। যদি আপনি ব্যাচ ড্রায়ার প্রযুক্তি ব্যবহার করেন তাহলে এটা দিয়ে বিভিন্ন ভাবে ফসল গুলো কে আদ্র অবস্থায় রাখতে পারবেন।
৭. পাওয়ার টিলার – আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নাম
পাওয়ার টিলার হলো অন্যতম একটি কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির নাম। বীজ বপণের পূর্বে যদি জমি সঠিক ভাবে প্রস্তুত করা নাহয় তাহলে ফসল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। জমি কম সময়ের মধ্যে ভালো ভাবে প্রস্তুত করার কাজে ব্যবহার করা হয় আধুনিক প্রযুক্তি পাওয়ার টিলার। আমরা হয়ত অনেকেই পাওয়ার টিলার এর সাথে পরিচিত।
৮. সেচ পাম্প – আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি
পরিমান মতো সেচের ব্যবস্থা করতে না পারলে কৃষি তে উন্নতি করা সম্ভব নয়। অনেক আগে থেকেই সেচ দেয়ার জন্য বিভিন্ন ধরণের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। বর্তমানে ইলেক্ট্রিসিটি ছাড়াই সৌর শক্তি ব্যবহার করে জমিতে সেচ দেয়ার অনেক মেশিন বাজারে পাওয়া যায়। এগুলো ব্যবহার করে খরচ অনেক বেশি কমিয়ে আনতে পারবেন।
৯. স্প্রেয়ার – আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নাম
জমিতে বিভিন্ন ধরণের কিটনাসক স্প্রে করার জন্য স্পেরেয়ার ব্যবহার করা হয়। কীটনাসক ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক দ্রব্য ও সার দেয়ার জন্য স্প্রেয়ার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। তবে বর্তমানে বিভিন্ন দেশে ড্রন প্রযুক্তি ব্যবহার করে জমিতে সঠিক ভাবে স্প্রে প্রদান করা হয়। আশা করা যায় খুব দ্রুত আমাদের দেশেও এই প্রযুক্তি চলে আসবে।
১০. রিপার – আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নাম
রিপার খুবই ছোট একটা মেশিন তবে কাজের ক্ষেত্রে অনেক বেশি উপকার করে। এটা দিয়ে একজন ব্যাক্তির মাধ্যমে ছোট ছোট ফশল ও ঘাস কাটা যায়। এটার মধ্যে একটি বক্সের মতো থাকে যেখানে সব কিছু পরে থাকে যার ফলে কাটা হয়ে হয়ে বক্সের ভিতর থেকে সংগ্রহ করে নেয়া যায়।
১১. হাইড্রোট্রিলার – আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নাম
কৃষিতে প্রায় সব আধুনিক প্রযুক্তি নাম বললাম তবে ঘাস কি এখনো হাতেই কাটবেন? একদমই নয় আধুনিক ঘাস কাটার মেশিন হাইড্রো টিলার ব্যবহার করে অনেক সহজেই কম সময়ের মধ্যে জমির ঘাস অপসারণ করতে পারবেন।
তো যাইহোক – উপরে দেয়া প্রযুক্তি ছাড়াও অনেক ধরণের প্রযুক্তি আছে যা দিয়ে আগের কার দিনের চেয়ে অনেক বেশি ফসল উতপাদন করা যায় অনেক কম সময় খরচ করে। তবে সব ধরণের প্রযুক্তি এখনো বাংলাদেশে আসেনি।
কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির গুরুত্ব
পূর্বেই বলেছি দেশের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড হলো কৃষি। বিশেষ করে বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আমাদের আয়ের মূল উতস হিসেবে কৃষি প্রধান পেশা হিসেবে কাজ করে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম সময় খরচ করে বেশি আয় করা যায়।
📌 আরো পড়ুন 👇
ফসল উতপাদন খরচ যতো বেশি কম হবে কৃষি তে মানুষের উন্নয়ন ততো দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। বিশ্বের প্রায় সব দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশের ও উচিত হবে দ্রুত সময়ের মধ্যে কৃষি তে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা।।
আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে আমাদের মতামত
আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নাম – আর্টিকেলে আমরা বেশ কয়েক টি আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে আপনাদের জানালাম। আপনারা জেলা কৃষি অফিসে আলাপ করে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করা ভালো হবে জেনে নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে যদি প্রশ্ন থেকে থাকে, তাহলে কমেন্ট করুন। আমরা আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। এতক্ষন ডিয়ার টেক ব্লগের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।