নফল রোজা রাখার নিয়ম। নফল রোজার নিয়ত (আরবি ও বাংলা উচ্চারণ)

পোষ্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

5/5 - (1 vote)

নফল রোজার নিয়ত – পবিত্র রমজান মাসে রোজা পালন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরজ। আল্লাহ তায়ালার কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় ইবাদত হলো রোজা। ফরজ আর ওয়াজিব রোজা ব্যাতিত যে রোজা রাখা হয় তাকে নফল রোজা বলে। ফরজ রোজার পাশাপাশি আমরা অনেকেই নফল রোজা রাখতে চাই।

কিন্তু নফল রোজা রাখার পূর্বে নফল রোজার নিয়ত ও কিভাবে নফল রোজা রাখতে হবে সে সম্পর্কে জানা অতিব জরুরি একটি বিষয়। আপনি যদি নফল রোজা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে চান তাহলে আর্টিকেল টি শেষ পর্যন্ত পড়ার চেষ্টা করুন।

নফল রোজার ফজিলত

ইসলামে ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদতের প্রতি বলা হয়েছে। নফল ইবাদতের মাধ্যমে অধিক সাওয়াব পাওয়া যায়। সবচেয়ে ভালো ইবাদতের মধ্যে নফল রোজা অন্যতম। আল্লাহ রোজাদার কে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন। ফরজ রোজা রাখার পরে নফল রোজা রাখা অনেক বড় সাওবের একটি ইবাদত। এ সম্পর্কে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) বলেন –

“যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে আল্লাহ তাআলা তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন”। (বুখারি ১৯০১)

উক্ত হাদিস থেকে বোঝা যায় রোজা রাখার মাধ্যমে শুধু সাওয়াব কামানোই যায় এমন নয় বরং পূর্বের সব গুনাহ গুলো কে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দেন। গুনাহ মাফের জন্য আমাদের উচিত বেশি বেশি রোজা রাখা এবং অবশ্যই সেটা ঈমানের সাথে হতে হবে। রোজা শুদ্ধ না হলে সারাদিন শুধু উপোস এই থাকতে হবে।

নফল রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব বোঝাতে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) আরো বলেন “যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য একটি নফল রোজা রাখল, আল্লাহ তায়ালা তার মাঝে এবং জাহান্নামের মাঝে একটি দ্রুতগামী ঘোড়ার ৫০ বছর রাস্তার দূরত্ব রাখবেন”। (কানযুল উম্মাল ২৪১৪৯)

নফল রোজা রাখার নিয়ম

নফল রোজা কখন রাখা উচিত হবে। আসলে আপনি বছরের ০৫ দিন ব্যাতিত সারা বছর নফল রোজা রাখতে পারেন। ফরজ  রোজার নিয়ম মেনেই আপনাকে নফল রোজা রাখতে হবে। ঈমানের সাথে রোজা রাখলে সেটা আল্লাহ তায়ালা কবুল করে নিবেন। নফল রোজা রাখার ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সময় আছে যেগুলো হলো –

১। সাপ্তাহিক নফল রোজা

মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সা) সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। সাপ্তাহিক এই দুই দিনে নফল রোজা রাখা সুন্নত।

২। মাসিক নফল রোজা

মাসিক নফল রোজার ক্ষেত্রে চন্দ্রমাসের ১৩,১৪, ১৫ তারিখে রোজায় অনেক ফজিলত রয়েছে। উক্ত ০৩ দিন কে আইয়ামে বিজ বলা হয় যার অর্থ হলো সাদা রং এর দিবস।

৩। বার্ষিক নফল রোজা

বছরে শাওয়াল মাসের ০৬ টি রোজা রাখা সুন্নত। শাওয়াল মাসের ০৬ রোজার ব্যাপারে মহানবী মুহাম্মাদ (সা) বলেন “যারা রমজানে রোজা পালন করবে এবং শাওয়ালে আরো ছয়টি রোজা রাখবে; তারা যেন পূর্ণ বছরই রোজা পালন করল”।

নফল রোজার নিয়ত কখন করব

নফল মানে হলো অতিরিক্ত। আর নফল রোজা মানে হলো অতিরিক্ত রোজা রাখা। নফল রোজার নিয়ত ফরজ রোজার মতই পালন করতে হয়। সাহরি খাওয়ার পূর্বে আপনার নফল রোজার নিয়ত করতে হবে। যদি কোনো কারনে সাহরির পূর্বে নিয়ত করতে ভুলে যান তাহলে দিনের বেলায় রোজা রেখে নিয়ত করলেও রোজার কোনো সমস্যা হবে না।

📌 আরো পড়ুন 👇

মনের ইচ্ছা বা বাসনা থাকলেই নিয়ত হয়ে যায় যদি আপনার নিয়ত মনে না থাকে সেক্ষেত্রে আপনি মনে মনে নফল রোজা রাখার ইচ্ছা পোষন করলেও হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তার বান্দার মনের সকল খবর সম্পর্কে অবগত আছেন।

নফল রোজা রাখার নিয়ত / Nofol Rojar Niyot

নফল রোজা রাখার নিয়ম, নফল রোজার বাংলা নিয়ত,

ফরজ রোজার ক্ষেত্রে যেভাবে নিয়ত করতে হয় ঠিক একইভাবে আপনি নফল রোজার নিয়ত করবেন। এখানে আমরা রোজার নিয়ত লিখে দিলাম

نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم

রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ সহ জানতে আমাদের এই আর্টিকেল টি পড়তে পারেন।

নফল রোজার নিয়তের বাংলা উচ্চারণ: 

অনেকেই আরবী দেখে পড়তে পারেন না। তাই নিচে দেখে নিন নফল রোজার নিয়তের বাংলা উচ্চারণ –  “নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম”।

নফল রোজা ভঙ্গের কারণ

রোজা কয়েকটি কারনে নস্ট হয়ে যেতে পারে। রোজা ভঙ্গের কারন গুলো যদি আপনি করে ফেলেন তাহলে নফল কিংবা ফরজ রোজা ভেঙ্গে যাবে। রোজা ভঙ্গের কারণ গুলো হলো

  • নিজে ইচ্ছা করে বমি করা
  • নারীদের সন্তান প্রসবের পর ঋতুস্রাব বা মাসিক হলে।
  • শক্তি বাড়ানোর ইনজেকসন বা সেলাইন এর মাধ্যমে শরিরে কিছু প্রবেশ করালে।
  • প্রসাব ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে শরিরে কিছু প্রবেশ করালে।
  • ইফতারের সময় হয়েছে ভেবে ইফতার হওয়ার পূর্বেই কিছু খেয়ে ফেললে।
  • মুখ ভরে বমি হলে।
  • বমি বমি ভাব থাকার পর গলা পর্যন্ত আসার পরে গিলে ফেললে।
  • ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করলে।
  • রোজা আছে জেনে অজু বা গোসলের সময় কুলি বা নাকে পানি দিতে গেলে যদি ভিতরে ঢুকে যায়
  • দাতের ফাকে আটকে থাকা খাবার জিহবা দিয়ে বের করে খেয়ে ফেললে।
  • কান বা নাকের মাধ্যমে শরিরে মেডিসিন প্রবেশ করালে।
  • রোজাদারকে জোর করে কেউ কিছু খাওয়ায় দিলে।
  •  বৃষ্টির পানি মুখে পরলে সেটা পান করলে
  • রোজা থাকা অবস্থায় ভুল করে কিছু খাওয়ার পর রোজা ভেংগে গেছে ভেবে আবার কিছু খেলে।

নফল রোজার রাখার সতর্কতা

নফল রোজার রাখার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা মানতে হবে। আপনাকে জানতে হবে কোন দিন নফল রোজা রাখা হারাম। শুধু মাত্র ৫ দিন ছাড়া আপনি বছরের প্রতি দিন নফল রোজা রাখতে পারবেন। যে ৫ দিনে রোজা রাখা হারাম সেই দিন গুলো হলো

  • রোজার ঈদের দিনে রোজা রাখা হারাম।
  • কুরবানির ঈদের দিন ও পরবর্তী ৩ দিন রোজা রাখা হারাম।

উক্ত দিন গুলোতে রোজা রাখলে সাওয়াব এর বিপরিতে গুনাহ হতে পারে। আপনি যদি নফল রোজা রাখার ইচ্ছা করেন তাহলে উক্ত ০৫ দিন ব্যাতিত সারাবছর রোজা রাখতে পারেন।

নফল রোজা সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর

নফল রোজা ভাঙলে কি হয়?

সাধারণত ফরজ রোজা ভাঙলে গোনাহ্ হয়। কিন্তু নফল রোজা ভাঙলে গোনাহ্ হয় না। তবে নফল রোজা ভাঙলে কাযা আদায় করা ওয়াজিব। আর কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে নফল রোজা ভাঙে, তখন কাফ্ফারা আদায় করতে হবে।

ভুলে কিছু খেলে নফল রোজা ভাঙ্গে?

না, ভুলে কিছু খেলে রোজা ভাঙ্গে না। এক্ষেত্রে রাসূল (সা:) বলেন, “যে ব্যক্তি ভুলে সাহরি খেয়ে ফেলে, সে তার রোজা রাখবে এবং আল্লাহ্‌ তার রোজার সাওয়াব দেবেন।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম) এজন্য বলা যায় – ভুলে কিছু খেলে নফল রোজা ভাঙ্গে না।

নফল রোজা সম্পর্কে আমাদের মতামত

নফল রোজার ফজিলত সম্পর্কে আর্টিকেল টি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। রোজা আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি অনন্য ইবাদত। আল্লাহ আমাদের সকলের ইবাদত গুলোকে কবুল করে নিক, আমিন।

নফল রোজার নিয়ত সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন। আমরা দ্রুত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। এতক্ষন ডিয়ার টেক ব্লগের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।


পোষ্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Comment