ব্যাংক কিভাবে বিনিময়ের মাধ্যমে সৃষ্টি করে (৮টি মাধ্যম)

পোষ্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

5/5 - (1 vote)

ব্যাংক কিভাবে বিনিময়ের মাধ্যমে সৃষ্টি করে, কী কী পদ্ধতি অনুসরণ করার মাধ্যমে একটি ব্যাংক তার তারল্য সংগ্রহ করে এবং মুনাফা অর্জন করে এসব বিষয় নিয়ে আজকের এই ব্লগে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

একটি ব্যাংকে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তারল্য। তারল্য না থাকলে একটি ব্যাংকের লেনদেন বন্ধ হয়ে যাবে। তারল্য ঠিক রাখার জন্য প্রতিটি ব্যাংককে বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করতে হয়। বিনিময়ের মাধ্যম থেকে ব্যাংকে যেমন অর্থের বহির্গমন হয়, ঠিক তেমনি আন্তঃপ্রবাহ ঠিক থাকে। ব্যাংক এ ধারা বজায় রাখার জন্য অনেকগুলো মাধ্যম ব্যবহার করে থাকে।

প্রতিটি ব্যাংকই বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে থাকে। কি কী পদ্ধতি অনুসরণ করার মাধ্যমে একটি ব্যাংক বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে তা নিয়ে আজকের এই ব্লগে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করবো। তো চলুন, বাণিজ্যিক ব্যাংক কিভাবে বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে এবং অন্যান্য ব্যাংক কিভাবে বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে তা জেনে নেয়া যাক।

ব্যাংক কিভাবে বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে

ব্যাংক বিভিন্ন পদ্ধতিতে বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে থাকে। চেক, ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং, আন্তর্জাতিক লেনদেন ইত্যাদি মাধ্যম ব্যবহার করার মাধ্যমে প্রতিটি ব্যাংক বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে থাকে। ব্যাংক যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করে বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে থাকে, এগুলো নিয়ে নিচে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

চেক ও ডেবিট কার্ড

ব্যাংক কিভাবে বিনিময়ের মাধ্যমে সৃষ্টি করে,

গ্রাহকরা তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে চেক লিখে অথবা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে পণ্য ও সেবা ক্রয় করতে পারেন। এই লেনদেনের মাধ্যমে, নগদ অর্থের পরিবর্তে চেক বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে অর্থের হস্তান্তর ঘটে, যা বিনিময়ের একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এই চেক এবং ডেবিট কার্ডের মাধ্যমেও ব্যাংক একটি বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে থাকে।

অর্থাৎ, ব্যাংকের ভিতর থাকা এসব সুযোগ-সুবিধা যেমন চেক এবং ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে মানুষ লেনদেন করে থাকে। যা ব্যাংকের ক্ষেত্রে একটি বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে।

মোবাইল ব্যাংকিং

গ্রাহকরা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ ব্যবহার করে তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ স্থানান্তর, বিল পরিশোধ এবং মোবাইল রিচার্জ করতে পারেন। এই লেনদেনগুলো নগদ অর্থ ব্যবহার না করেই সম্পন্ন করা যায়, যার ফলে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করা হয়।

নগদ অর্থ ব্যবহার না করা হলেও অর্থের লেনদেন করা হয় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করে। যা একটি ব্যাংকের লেনদেন সৃষ্টি করে। এসব মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম ব্যবহার করেও একটি ব্যাংক বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে থাকে।

অনলাইন ব্যাংকিং

গ্রাহকরা ইন্টারনেট ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে তাদের অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারেন, বিল পরিশোধ করতে পারেন এবং অনলাইনে কেনাকাটা করতে পারেন। এই লেনদেনগুলো নগদ অর্থ ব্যবহার না করেই সম্পন্ন করা যায়, যার ফলে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা হয়।

অনলাইন ব্যাংকিং আমাদের দেশে অনেক দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। অনলাইন ব্যাংকিং এর কারণে ব্যাংক বিনিময়ের একটি মাধ্যম সৃষ্টি করতে পারে।

ক্রেডিট কার্ড

ব্যাংকের গ্রাহকরা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে যেকোনো পণ্য ও সেবা ক্রয় করতে পারেন এবং পরবর্তীতে বিল পরিশোধ করতে পারেন। এই পদ্ধতিতে, ক্রেডিট কার্ড ঋণের একটি রূপ হিসেবে কাজ করে, যা ভবিষ্যতের অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

ক্রেডিট কার্ডকে ব্যাংক থেকে ঋণ দেয়ার একটি মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা ব্যবহার করে ব্যাংক বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে থাকে।

আন্তর্জাতিক লেনদেন

ব্যাংকগুলি বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনের জন্য বিভিন্ন সেবা প্রদান করে, যেমন ওয়্যার ট্রান্সফার এবং বিদেশী মুদ্রা বিনিময়। এই সেবাগুলি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও ব্যক্তিগত লেনদেনকে সহজতর করে, যার ফলে বিভিন্ন মুদ্রার মধ্যে বিনিময় সম্ভব হয়।

গ্রাহকরা ব্যাংককে ব্যবহার করে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় এবং বিক্রয় করার মাধ্যমে লেনদেন করে থাকে। যা ব্যাংকের জন্য আন্তর্জাতিক লেনদেন করার পথ সুগম করে দেয়। এভাবে, ব্যাংক আন্তর্জাতিক লেনদেন করার মাধ্যমে বিনিয়োগের মাধ্যম সৃষ্টি করে থাকে।

ব্যাংকের আজ্ঞাপত্ৰ (Bank Draft)

ব্যাংক কিভাবে বিনিময়ের মাধ্যমে সৃষ্টি করে,

ব্যাংক আজ্ঞাপত্র বা ব্যাংক ড্রাফট হলো একটি নির্দেশনামা যার মাধ্যমে একটি ব্যাংকের শাখা অন্য কোনো শাখা, ব্যাংক, বা প্রতিনিধি ব্যাংককে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করার জন্য নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশ অনুসারে, প্রাপক ব্যাংক চাহিদা অনুযায়ী অর্থ প্রদানে বাধ্য থাকে।

দূর-দূরান্তের লেনদেনের ক্ষেত্রে, বিক্রেতা বা পাওনাদারের নিরাপত্তার জন্য ব্যাংক ড্রাফট ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে, বিক্রেতা তার ব্যাংকে অর্থ জমা দিয়ে একটি আজ্ঞাপত্র তৈরি করে। এই আজ্ঞাপত্রে ক্রেতার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য, অর্থের পরিমাণ এবং লেনদেনের উদ্দেশ্য উল্লেখ থাকে।

ক্রেতা এই আজ্ঞাপত্র নিয়ে তার ব্যাংকে গেলে, ব্যাংক নির্দেশিত অর্থ প্রদান করে। এই প্রক্রিয়াটির মাধ্যম নগদ অর্থ বহন করার ঝুঁকি থাকেনা এবং লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে। ব্যাংক ড্রাফট ব্যবহার করে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে থাকে।

পে-অর্ডার (Pay Order)

পে-অর্ডার হলো একটি আনুষ্ঠানিক দলিল যার মাধ্যমে ব্যাংকের একটি শাখা প্রাপককে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়। বড় ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে, বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে পে-অর্ডার ব্যবহার করা হয়।

এই পদ্ধতিতে, ক্রেতা বা অর্থ প্রদানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে প্রাপকের নামে একটি পে-অর্ডার সংগ্রহ করে। পে-অর্ডারে অর্থের পরিমাণ, প্রাপকের তথ্য এবং লেনদেনের উদ্দেশ্য উল্লেখ থাকে। ক্রেতা প্রাপককে পে-অর্ডারটি প্রদান করে। প্রাপক তার ব্যাংকে পে-অর্ডারটি জমা দিলে, ব্যাংক নির্দেশিত অর্থ প্রদান করে। এভাবে করে পে-অর্ডারকে ব্যাংক একটি বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।

প্রত্যয়পত্র (Letter of Credit)

প্রত্যয়পত্র বা LC (Letter of Credit) হলো একটি আইনি দলিল যার মাধ্যমে একটি ব্যাংক পাওনাদারের পক্ষে নিশ্চয়তা প্রদান করে। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে, নির্দিষ্ট পণ্যের বিপক্ষে ব্যাংক রপ্তানিকারককে প্রত্যয়পত্রের মাধ্যমে নিশ্চয়তা দেয় যে, আমদানিকারক যদি পণ্যের মূল্য পরিশোধ করতে অক্ষম হয়, তবে ব্যাংক তা পরিশোধ করবে।

📌 আরো পড়ুন 👇

এই কারণে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে লেনদেনের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রত্যয়পত্রই বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে গৃহীত হয়।

ব্যাংক নিশ্চয়তা সনদ (Bank Guarantee Certificate)

ব্যাংক নিশ্চয়তা সনদ হলো একটি আনুষ্ঠানিক দলিল যার মাধ্যমে ব্যাংক নির্দিষ্ট লেনদেনের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু সম্পন্ন হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এই নিশ্চয়তা বিভিন্ন ধরণের লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যার মধ্যে রয়েছে:

  1. আমদানি-রপ্তানি: ব্যাংক রপ্তানিকারককে নিশ্চিত করে যে আমদানিকারক পণ্যের মূল্য পরিশোধ করবে।
  2. ঋণ: ব্যাংক ঋণগ্রহীতাকে নিশ্চিত করে যে ঋণ পরিশোধ করা হবে।
  3. টেন্ডার: ব্যাংক টেন্ডারদাতাকে নিশ্চিত করে যে তারা টেন্ডারের শর্তাবলী পূরণ করবে।
  4. বীমা: ব্যাংক বীমা প্রদানকারীকে নিশ্চিত করে যে বীমা দাবি পরিশোধ করা হবে।

উপরোক্ত এই মাধ্যমগুলো সহ আরও অনেক মাধ্যম ব্যবহার করে ব্যাংক বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে থাকে এবং অর্থের বহির্গমন এবং আন্তঃপ্রবাহ বজায় রাখে। এভাবে করে প্রায় প্রতিটি ব্যাংক তাদের তারল্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়।

ব্যাংকের বিনিময় সৃষ্টি মাধ্যম সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন‌উত্তর

কোন ব্যাংক বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে?

বাণিজ্যিক ব্যাংক আমাদের বিশ্বের প্রায় সকল ব্যাংকই বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে থাকে। 

বাণিজ্যিক ব্যাংক বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে কোনটি সৃষ্টি করে?

বাণিজ্যিক ব্যাংক বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে হুন্ডি সৃষ্টি করে।

ব্যাংকের বিনিময় সৃষ্টি মাধ্যম সম্পর্কে আমাদের মতামত

আজকের এই ব্লগে আপনাদের সাথে ব্যাংক কিভাবে বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে, ব্যাংক কোন কোন পদ্ধতি ব্যবহার করে তাদের বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে ব্যাংক কিভাবে বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে এবং তা থেকে তাদের তারল্য বজায় রাখে তা বিস্তারিত জানতে পারবেন।

ব্যাংকের বিনিময় সৃষ্টির মাধ্যম সম্পর্কে যদি প্রশ্ন থেকে থাকে, তাহলে কমেন্ট করুন। আমরা আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। এতক্ষন ডিয়ার টেক ব্লগের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।


পোষ্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Comment