খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয়?

পোষ্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

5/5 - (1 vote)

আপনি কি খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয় তা জানতে আগ্রহী? ইসবগুলের ভুসি অনেক উপকারী একটি খাবার। পানিতে ভিজিয়ে রেখে প্রতিদিন খেলে শরীরের অনেক উন্নতি হয়। ইসবগুলের ভুসিতে কি কি উপকারিতা রয়েছে তা নিয়েই আজ আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

যারা শরীর সম্পর্কে সচেতন, তাদের মাঝে অধিকাংশ মানুষই সকালবেলা খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেয়ে থাকেন। ইসবগুলের স্বাস্থ্যউপকারিতা অনেক বেশি। তো চলুন, খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয় জেনে নেয়া যাক।

ইসবগুলের ভুসি কি?

অনেকেই জানেন না যে ইসবগুল কি বা ইসবগুলের ভুসি কি। এটি যে একটি খাদ্য উপাদান তা হয়তো জানেন। ইসবগুলের ভুসি হল ইসবগুলের বীজের খোসা। ইসবগুল একটি একবর্ষজীবী উদ্ভিদ যা মূলত ভারত, পাকিস্তান এবং মধ্যপ্রাচ্যে জন্মায়। ইসবগুলের বীজের খোসায় প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ থাকে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, স্থুলতার মতো বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

ইসবগুলের ভুসি একটি পুষ্টিকর খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ, প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ থাকে। ইসবগুলের ভুসি বিভিন্নভাবে খাওয়া যেতে পারে। দুধ, পানি, ফলের রস বা অন্যান্য খাবারের সাথে ভিজিয়ে খেয়ে থাকেন অনেকেই। এটিকে ওটস, মুড়ি, সালাদ বা অন্যান্য খাবারের সাথেও মিশিয়ে খাওয়া যায়।

খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয়

খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয়

ইসবগুলের ভুসি একটি পুষ্টিকর খাবার যাতে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এটিতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ, প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান থাকে। খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেলে অনেক স্বাস্থ্যউপকারিতা পাওয়া যায়। খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয় তা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

📌 আরো পড়ুন 👇

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: ইসবগুলের ভুসিতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ থাকে, যা পাকস্থলীতে জল শোষণ করে একটি জেল তৈরি করে। এই জেল পাচন প্রক্রিয়াকে দ্রুত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। তাই, আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে ইসবগুলের ভুসি খান।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: ইসবগুলের ভুসিতে থাকা খাদ্য আঁশ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ডাক্তাররা ইসবগুলের ভুসি খেতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে: ইসবগুলের ভুসিতে থাকা খাদ্য আঁশ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এটি হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। ইসবগুলের ভুসির বহুবিধ স্বাস্থ্যউপকারিতার মাঝে এটি অন্যতম।

ওজন কমাতে সাহায্য করে: ইসবগুলের ভুসিতে থাকা খাদ্য আঁশ ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। ডায়েট করার জন্য কিংবা শরীরের ওজন কমানোর জন্য খাবারের ক্ষুধা কমানো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই, ইসবগুলের ভুসি খেতে হবে। খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি পানিতে ভিজিয়ে খেলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়।

অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে: ইসবগুলের ভুসিতে থাকা খাদ্য আঁশ অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে। এটি অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। যারা জানেন না যে অন্ত্র কি – পাকস্থলী থেকে পায়ু পর্যন্ত লম্বা প্যাচানো নালিকে অন্ত্র বলে। 

ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে ইসবগুলের ভুসি ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। তাই প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

হজমশক্তি বাড়ায়: ইসবগুলের ভুসি হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। খাবার হজম করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়াতে ইসবগুলের ভুসি প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করে। হজমশক্তি কম হলে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম অনুসরণ করলে অল্পদিনের মাঝেই আপনার শরীরে অনেক পরিবর্তন লক্ষ করবেন। অনেকেই জানেন না যে কীভাবে ইসুবগুলের ভুসি খেতে হয়। তাই, তারা শুকনো খাবেন নাকি পানিতে ভিজিয়ে খাবেন এই দুশ্চিন্তায় থাকেন। 

ইসুবগুলের ভুসি খেতে হলে আপনাকে পানিতে ভিজিয়ে খেতে হবে। তবে, শুধু ইসুবগুলের ভুসি না খেয়ে সঙ্গে যদি ছোলা এবং কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়া যায় তবে অনেক উপকারিতা পাওয়া সম্ভব। এজন্য, রাতের বেলা এক গ্লাস পানিতে এক চামচ পরিমাণ ইসুবগুলের ভুসি, কয়েকটি কিসমিস এবং কিছু পরিমাণ ছোলা বুট ভিজিয়ে রাখতে হবে।

এরপর, সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখবেন ইসুবগুলের ভুসি ফুলে অনেক বড় হয়ে গেছে। এই অবস্থায় গ্লাসের সম্পূর্ণ পানি খেতে হবে। প্রথমের দিকে ইসুবগুলের ভুসি পানিতে ভিজিয়ে খেতে কিছুটা অস্বস্তি হতে পারে বা খেতে নাও পেতে পারেন, তবে কিছুদিন অভ্যাস করলে পরবর্তীতে আর সমস্যা হবে না।

খালি পেটে তোকমা খেলে কি হয়

তোকমার তেল ত্বকের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। এটি ব্রণ, ফুসকুড়ি, একজিমা, ফাঙ্গাল ইনফেকশন ইত্যাদি ত্বকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তোকমা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে তাতে থাকা ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থগুলো পানিতে দ্রবীভূত হয়। এই পানি পান করলে তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।

তোকমা নিয়মিত খেলে গ্যাস্ট্রিক, আলসার, কোলাইটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি পেটের সমস্যা দূর হয়। এটি হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং ক্ষুধামন্দা দূর করে। এছাড়াও, তোকমার আরও কিছু উপকারিতা রয়েছে, যেমন: তোকমা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, তোকমা হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে, তোকমা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

তোকমা ও ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয়

তোকমা ও ইসবগুলের ভুসি দুটিই স্বাস্থ্যকর খাবার। তোকমা একটি বীজ যাতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার, এবং ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকে। ইসবগুলের ভুসিও একটি বীজ যাতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। তোকমা ও ইসবগুলের ভুসি উভয়েই ফাইবার সমৃদ্ধ। এগুলো একসাথে খাওয়ার ফলে হজম প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়। ফলে, কোস্টকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

📌 আরো পড়ুন 👇

ডায়াবেটিস,হৃদরোগ সহ বিভিন্ন রোগে তোকমা ও ইসবগুলের ভুসা খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। তাই, প্রতিদিন তোকমা ও ইসবগুলের ভুসি পানিতে ভিজিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এছাড়াও, পানিতে কিসমিস এবং ছোলা বুট ভিজিয়ে নিতে পারেন। ফলে, আপনার শরীরের অনেক প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে এসব খাবার খেলে।

তোকমা খেলে কি ওজন কমে

ওজন কমাতে তোকমার বীজ একটি কার্যকর খাবার। তোকমার বীজে থাকা প্রোটিন ও ফাইবার ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, তোকমার বীজে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে। তোকমার বীজ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ডায়রিয়া ও আমাশয়ের প্রকোপ কমায় এবং গ্যাস্ট্রিক আলসারের ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। তোকমার বীজ ক্ষুধা কমিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে।

তোকমা আর চিয়া সিড কি এক

চিয়া সিড এবং তোকমা দানা দেখতে একই রকম হলেও এরা দুটি ভিন্ন ধরনের বীজ। চিয়া সিড মেক্সিকোতে উৎপন্ন হয় এবং দক্ষিণ এশিয়ায় এর উৎপাদন হয় না বললেই চলে। তোকমা দানা মূলত এশিয়াতে উৎপন্ন হয়। অনেকেই তোকমা এবং চিয়া সিডকে এক করে ফেলেন, তবে তোকমা এবং চিয়া সিড এক নয়। 

খেলি পেটে ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের মতামত 

আজকের এই পোস্টে খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয়, ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম, খালি পেটে তোকমা খেলে কি হয়, তোকমা ও ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয়, তোকমা খেলে কি ওজন কমে, তোকমা আর চিয়া সিড কি এক এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয় এ সম্পর্কিত অনেক তথ্য জানতে পারবেন।

আরও কোনো বিষয়ে জানার থাকলে মন্তব্য করুন। এছাড়াও, এমন আরও তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইট প্রতিনিয়ত ভিজিট করুন।

ইসবগুলের ভুসি সম্পর্কে যদি প্রশ্ন থেকে থাকে, তাহলে কমেন্ট করুন। আমরা আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। এতক্ষন ডিয়ার টেক ব্লগের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।


পোষ্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Comment