আকাইদ শব্দের অর্থ কি – ঈমানের মৌলিক বিষয় গুলোর মধ্যে আকাইদ অন্যতম। সঠিক আকিদা ছাড়া নিজেকে কখনো মুমিন হিসেবে দাবি করা যাবে না। মহান আল্লাহ তায়ালাকে মনে প্রানে সত্তা হিসেবে স্বীকার করে নেয়া হলো আকিদার মূল বৈশিষ্ট।
পৃথিবীতে যুগে যুগে মহান আল্লাহ তায়ালা অনেক নবী ও রাসুল পাঠিয়েছেন, আসমানী কিতাব নাজিল করেছেন, জান্নাত – জাহান্নাম ও পরকাল তৈরি করেছেন। এসব কিছুর উপরে বিশ্বাস রাখার নাম হলো আকিদা।
আকাইদ প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমাদের আজকের আর্টিকেলে আকাইদ সম্পর্কে আপনাদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করবো। যদি আপনি আকাইদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল টি পড়ে ফেলুন।
আকাইদ শব্দের অর্থ কি
আকাইদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পূর্বে সবার প্রথমে জেনে নেই আকাইদ শব্দের শাব্দিক অর্থ আসলে কি। আকাইদ শব্দটি আরবী ভাষা হতে এসেছে। আকাইদ এর বাংলা অর্থ হলো – বিশ্বাস, বিশ্বাসমালা, মযবুত বিশ্বাস, ধর্মীয় বিশ্বাস ইত্যাদি।
আকাইদ শব্দের বহুবচন কি
আকাইদ শব্দটি মূলত বহুবচন। আকাইদ শব্দের একবচন শব্দ হলো আকিদা।
আকাইদ কাকে বলে
আক্ষরিক অর্থে: যে বিশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের চিন্তা ও কাজ কর্ম সম্পাদিত হয় তাকে আকাইদ বলা হয়। মুলত আকাইদ বলতে ইসলামের মৌলিক বিষয় তথা আল্লাহ্, নবী রাসূল, ফেরেশতা, আসমানী কিতাব সমূহ, পরকাল, জান্নাত ও জাহান্নাম ইত্যাদি বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করাকে বোঝায়।
এককথায় ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর উপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করাকে আকাইদ বলে। এর কোন একটিতে অবিশ্বাস করলে কেউ মুসলমান হতে পারে না। তাই আকাইদ হলো ইসলামের প্রধান ভিত্তি।
আকাইদ এর পরিচয়
একজন মানুষ আকাইদের মাধ্যমে ইসলামের মধ্যে প্রবেশ করে। আকাইদ এর উপরে বিশ্বাস ছাড়া কোনো ভাবেই ইসলামে প্রবেশ করা সম্ভব না। আল্লাহর সকল বিধি বিধান ও নিয়ম পালনের মাধ্যমে জীবন পরিচালনা করাকে আকাইদ বলে। আকাইদ এর দুইটি দিক রয়েছে যেমন –
- প্রয়োগিক
- বিশ্বাস গত
আকাইদ এর মধ্যে অন্যতম একটি গ্রুরুত্বপূর্ণ দিক হলো প্রয়োগিক দিক। সাধারণত নিচের বিষয় গুলোর মাধ্যমে জীবন পরিচালনা করা আকাইদের প্রয়োগিক দিক গুলো কাজ করে –
- আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপণ করা ও কালেমা কে স্বীকৃতি প্রদান করা।
- ফরজ ইবাদত পালণ করা যেমন – নামাজ, রোজা ইত্যাদি।
- যদি সামর্থ থাকে তাহলে হজ্জ করা।
- সামর্থ থাকলে যাকাত প্রদান করা।
এসব বিষয় গুলো আকাইদের প্রয়োগিক দিক। যেগুলো মনে প্রানে বিশ্বাস এর পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনে পালণ করতে হবে।
📌 আরো পড়ুন 👇
আকাইদের অন্য আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বিশ্বাসগত। যদি আপনি এগুলো মনে প্রানে বিশ্বাস না করেন তাহলে আপনার আকিদা সহিহ বলে গন্য হবে না। দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত হলো আকিদা অনুয়ায়ী জীবন যাপন করা। বিশ্বাসগত যে বিষয় গুলো আছে সেগুলো হলো –
- মহান আল্লাহ তায়ালা ও তার প্রেরিত সকল নবী ও রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপণ করা।
- পরকাল সম্পর্কে বিশ্বাস স্থাপণ করা।
- মহান আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক প্রেরিত সকল আসমানি কিতাবের উপরে বিশ্বাস আনা।
- আল্লাহর ফেরেশতাগনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপণ করা।
- জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে বিশ্বাস স্থাপন করা।
আকিদার দুটো দিক যদি সঠিক ভাবে মানা হয় তাহলে সেটা সহিহ আকিদা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মোট কথা হলো – আল্লাহর সকল কিছুর উপরে মনে প্রানে বিশ্বাস রাখতে হবে।
আকাইদের মূল বিষয়সমুহ
আকাইদ এর ছয়টি মূল বিষয় রয়েছে। এগুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করতে পারলে সে মুসলমান হতে পারবে না। অর্থাৎ সে ব্যক্তি ঈমান হারা হয়ে যাবে। এজন্য আকাইদের এই ছয়টি বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি। নিম্নে আকাইদের ছয়টি মূল বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. আল্লাহর উপর বিশ্বাস
আকাইদের প্রথম ও প্রধান বিষয় হলো আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা এবং এই বিশ্বাস অটুট রাখা। আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তার কোন শরীক নাই। তিনি একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, সর্বশক্তিমান ও পরম দয়ালু। এই সকল বিষয়ের উপর কারো যদি কোন সন্দেহ থাকে তাহলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।
২. ফেরেশতাদের উপর বিশ্বাস
মহান আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতা নামক এক আলোর সৃষ্টি করেছেন। যারা তারা দেশ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করে। ফেরেশতাদের অনেক কাজ আছে, যেমন জীবন মৃত্যুর হিসাব রাখা ভালো-মন্দ কাজের হিসাব রাখা ঝড়-বৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদ। ফেরেশতাদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা আকিদার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে একটি।
৩. নবী-রাসুলদের উপর বিশ্বাস
মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন সময় নবী-রাসূলদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। হযরত মুহাম্মদ (সা.) হলেন ইসলামের সর্বশেষ নবী। তার শিক্ষায় আমাদেরকে অনুসরণ করে চলতে হবে।
৪. আসমানি কিতাবের উপর বিশ্বাস
মহান আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য নবী রাসুল প্রেরণ করেছেন। তিনি বিভিন্ন নবী-রাসূলগণের উপর বিভিন্ন আসমানী কিতাব নাযিল করেছেন। তিনি সর্বমোট ১০৪ খানা আসমানী কিতাব নাজিল করেছেন। তাওরাত, জাবুর, ইঞ্জিল এবং কুরআন হল চারটি প্রধান আসমানি কিতাব।
৫. পরকালের উপর বিশ্বাস
মানুষকে মৃত্যুর পর আবার জীবিত করা হবে। এবং মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের বিচার করবেন। দুনিয়াতে যারা ভাল কাজ করেছে, আল্লাহর হুকুম মেনে চলছে, আল্লাহ তাদেরকে পুরস্কার হিসেবে জান্নাত দান করবেন। এবং যারা খারাপ কাজ করছে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিধি-বিধান অমান্য করে চলেছে, তাদের জন্য পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি।
৬. তাকদীরের উপর বিশ্বাস
আল্লাহর সর্বজ্ঞ ও নিয়ন্ত্রণকারী। তিনি সব জানেন ও নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি ভালো-মন্দ সবকিছু নির্ধারণ করেন। একজন মুমিন বিশ্বাস করেন আল্লাহ যা করেন, তা বান্দার ভালোর জন্যই করেন।
উপরোক্ত আকাইদের এই ছয়টি বিষয় আমাদের ঈমানকে দৃঢ় করে এবং আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা এবং সে সম্পর্কে আমল করা প্রতিটা মুসলমানের দায়িত্ব কর্তব্য।
আকাইদের গুরুত্ব
মুসলিম জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে আকিদা। সঠিক আকিদা আমাদের জীবনকে সুন্দর সুখময় করে তুলতে পারে। তার মধ্যে সকলের উচিত আকিদা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা এবং তা মেনে চলা।
কেননা সহিহ আকিদা পালণ কারি আল্লাহ তায়ালার একজন প্রিয় বান্দা হিসেবে মনোনিত হবেন। আল্লাহ তায়ালার নিয়ামত ভোগ করতে পারবেন। সর্বোপরি বিপদে আপদে আল্লাহ তায়ালার উপরে আস্থা রেখে জীবন পরিচালনা করা সবচেয়ে উত্তম। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল কে যেন সহিহ আকিদা পালন করার তৌফিক দান করেন।
আকাইদ সম্পর্কে আমাদের মতামত
আকাইদ শব্দের অর্থ কি আর্টিকেলে আমরা আকিদা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরলাম। মানুষ তার জীবন ব্যাবস্থার ক্ষেত্রে যা কিছু সঠিক মনে করে সেটাই হলো আকিদা। তবে সেটা যদি আল্লাহ তায়ালা ও তার নবী রাসূলের উপরে ও তার নাজিল কৃত সকল কিতাব সমূহের উপরে হয় তাহলে সেটা সহিহ আকিদা হিসেবে গন্য করা হবে।
আকাইদ সম্পর্কে যদি প্রশ্ন থেকে থাকে, তাহলে কমেন্ট করুন। আমরা আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। এতক্ষন ডিয়ার টেক ব্লগের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।